পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৭২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

নামে এক্ষণে প্রায় পরস্পর সংলগ্ন দুইখানি গ্রাম হইয়াছে। দীঘল গিরিয়া হইতেই ছোট গিরিয়ার উৎপত্তি। অষ্টাদশ শতাব্দীর যুদ্ধের সময় হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত গিরিয়া গ্রামের মধ্যে মধ্যে স্থান পরিবর্তন ঘটিয়াছে বলিয়া বোধ হয়।

 মীর কাসেমের সৈন্যের সহিত ইংরেজদিগের যে-যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তাহার স্থল বিভিন্ন। এই যুদ্ধ কেবলই ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে বাঁশলই নদীর মোহনার নিকট হইয়াছিল। সে স্থানের কিয়দংশ ভাঙ্গিয়া গিয়াছে এবং ভাগীরথীর পূর্বতীরে লালখার দেওয়াড় নামে সুবৃহৎ চরে পরিণত হইয়াছে। লালখার দেওয়াড় এক্ষণে একখানি বিস্তৃত পল্লী হইয়া উঠিয়াছে। বাঁশলইয়ের বর্তমান মোহানা হইতে পূর্ব মোহানা অপেক্ষাকৃত পূর্বদিকে ছিল; এক্ষণে তাহা লালখার দেওয়াড়ের গর্ভস্থ। বাঁশলই রাজমহল পর্বতশ্রেণী হইতে বহির্গত হইয়া নানাস্থলে বগতি অবলম্বনপূর্বক জঙ্গীপুরের নিকট কানুপুর নামক স্থানের উত্তরে ভাগীরথীর সহিত মিলিত হইয়াছে। এই কানুপুরে বহুসংখ্যক দর বাস ছিল। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, তাঁহারা খাইবার গিরিপথ হইতে উড়িষ্যা পর্যন্ত সর্বত্র দস্যুবৃত্তি করিত। বাশলই-এর মোহানা হইতে সূতী তিন কোশেরও অধিক উত্তরে হইবে। মীর কাসেমের সৈন্য কাটওয়া মোতিঝিলের নিকট পরাজিত হইয়া তীতে আসিয়া অন্যান্য সৈন্যদের সহিত মিলিত হয়। সূতীতে মীর কাসেমের ইউরোপীয় ও আর্মেনীয় সেনাপতি সমরু ও মার্কার অবস্থিতি করিতেছিলেন। তন্নি তাহার দেশীয় প্রধান প্রধান সেনাপতি আসদউল্লা, নাশীর খাঁ, বদরউদ্দীন, শের আলি প্রভৃতিও ইংরেজদিগকে বাধা প্রদান করিবার জন্য প্রবৃত্ত হন। মেজর আডামূসের অধীন ইংরেজ সৈন্যগণ মুর্শিদাবাদ হইতে গঙ্গা পার হইয়া ভাগীরথীর পশ্চিমতীরস্থ বাদশাহী সড়ক ধরিয়া সূতীর দিকে অগ্রসর হয়। মুর্শিদাবাদ হইতে সূতী পর্যন্ত ভাগীরথীর উভয় পার দিয়া দুইটি সড়ক চলিয়া গিয়াছে। সরফরাজের সৈন্য পূর্বপারের সড়ক দিয়া গমন করায়, খামরা ও গিরিয়ায় উপস্থিত হইয়াছিল; কিন্তু ইংরেজ-সৈন্য পশ্চিমপারের সড়ক দিয়া বাঁশলইয়ের মোহানার নিকট উপস্থিত হয়। মীর কাসেমের পরাজিত সৈন্যগণও উক্ত সড়ক দিয়া সূতীর দিকে গিয়াছিল। ১৭৬৩ খ্রীঃ অব্দের আগস্ট মাসে এই যুদ্ধ হইয়াছিল। ভাগীরথীর কেবল পশ্চিম তীরে সূতীর নিকট এই যুদ্ধ হওয়ায়, মুতাক্ষরীনকার প্রভৃতি ইহাকে সূতীর যুদ্ধ বলিয়া নির্দেশ করিয়া থাকেন। ইংরেজরা ইহাকে গিরিয়ার যুদ্ধ কহেন।

 আমরা পূর্বে বলিয়াছি, সূতী পর্যন্ত ভাগীরথীর উভয়তীরবর্তী প্রান্তরের নামই গিরিয়া-প্রান্তর; সুতরাং উক্ত বিষয়ে কোনই পার্থক্য নাই। মীর কাসেমের সৈন্যগণের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়ভাবেই করা গিয়াছিল। ভাগীরথী ও বাঁশলই তাহাদের দুই পার্শ্বের পরিখাস্বরূপ হইয়াছিল; তদ্ভিন্ন তাঁহারা অন্যান্য দিকেও পরিখা খনন করিয়াছিল। তাহার মুর্শিদাবাদ হইতে পশ্চিমে যাইবার একমাত্র সড়ক অধিকার। করিয়া রাখিয়াছিল। মধ্যস্থলে সমরু ও মার্কার, দক্ষিণ পার্শ্বে আসদউল্লা ও বাম পার্শ্বে শের আলি ইংরেজ সৈন্য মথিত করিবার জন্য অপেক্ষা করিতেছিল। আসদউল্লার