পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
আলিবর্দীর বেগম
৮১

আলিবর্দীর বেগম নির্ভীকচিত্তে রোেল্লাসের আনন্দোপভোগের কথা আমরা সকল স্থলে জানিতে পারি না। রাণী রাজসিংহের সৈন্যহস্তে বন্দী হইয়া বাদশাহ আরঙ্গজেবের বেগমেরা। আর্তনাদে আকাশ বিদীর্ণ করিয়াছিলেন; কিন্তু দুর্দমনীয় মহারাষ্ট্রীয়দিগের হস্তে বহুবার কষ্ট ভোগ করিয়াও কখন সেই মহীয়সী মহিলার হৃদয় বিচলিত হয় নাই।

 আমরা পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, রাজ্যসংক্রান্ত যাবতীয় প্রধান প্রধান কার্যে নবাববেগমের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল। দুই একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সহিত তাহার সেই সম্বন্ধের উল্লেখ করা যাইতেছে। সকলেই অবগত আছেন যে, নবাব আলিবর্দী খাঁর সময়ে বঙ্গরাজ্য বারংবার মহাষ্ট্রীয়গণকর্তৃক আক্রান্ত হয়। তিনি তাহাদিগের অত্যাচারে জর্জরিত এবং অনন্যোপায় হইয়া বিশ্বাসঘাতকতাপূর্বক রগুজী ভোসলার সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতকে মনকরার ময়দানে নিহত করেন। ভাস্কর পণ্ডিতের মৃত্যুশ্রবণে রঘুজী অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া অবশেষে স্বয়ং সসৈন্যে বাঙ্গলায় আসিয়া উপস্থিত হন। তিনি প্রথমে উড়িষ্যায় আগমন করেন এবং তথাকার শাসনকর্তা দুর্লভরামকে বন্দী করিয়া, বীরভূম প্রদেশ দলিত করিতে করিতে বিহারে উপস্থিত হন। তথায় বিদ্রোহী আফগান সৈন্যদিগের সহিত তাহার মিলন সংঘটিত হয়। বিহারের নবাবের সহিত মহারাষ্ট্রীয়দিগের ঘোরতর যুদ্ধ ঘটে। ক্রমাগত যুদ্ধে উভয় পক্ষই অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া উঠে। বিশেষতঃ নবাবের অনেক আফগানসৈন্য উৎসাহসহকারে যুদ্ধ না করিয়া, বিদ্রোহী আফগানদিগের সহিত মিলিত হইবার জন্য চেষ্টা করিতেছিল। নবাব আফগানদিগের ব্যবহারে অত্যন্ত মর্মাহত হইয়া কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়েন। সমুখে ভীষণ শত্রুগণ সর্বধ্বংসসূচক হুঙ্কার ছাড়িতেছে এদিকে নিজ সৈন্যগণ বিশ্বাঘাতকতাপূর্বক তাহার পক্ষ পরিত্যাগ করিতে উদ্যত, এরূপ অবস্থায় নবাবের মন অত্যন্ত বিচলিত হইয়া উঠিল। এক দিন সহসা তিনি অন্তঃপুরমধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া নবাব-বেগমের সম্মুখে উপবিষ্ট হইলেন। নবাব-বেগম তাহাকে বিষন্নচিত্ত দেখিয়া অনুযোগ করিলেন। অনন্তর নবাবের বিষাদের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, নবাব বলিলেন যে, আমি আমার লোকদিগের মধ্যে অন্যরূপ ভাব দেখিতেছি, কেন যে এ-সকল ব্যাপার ঘটিতেছে, বলিতে পারি না। নবাব-বেগম এই কথা শুনিয়া নিজেই মজঃফর আলি খা ঁও ফকীর আলি খা ঁনামক দুই ব্যক্তিকে রঘুজীর নিকট দূতস্বরুপ পাঠাইয়া দেন।[১] যাহাতে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হয়, তাহাই তাহার উদ্দেশ্য ছিল। তাঁহারা মহারাষ্ট্রীয়দিগের পথপ্রদর্শক ও নবাবের প্রবল-শত্রু মীর হাবীবের নিকট উপস্থিত হইলে, মীর হাবীব তাহাদিগকে

 

  1. Seir Mutagherin Trans., Vol. I, p. 522. ইতিপূর্বে যে-সময়ে আলিবর্দী সরফরাজের ভগিনীপতি মুশিদকুলীখার নিকট হইতে উড়িষ্যা অধিকার করিতে অগ্রসর হইয়াছিলেন সেই বালাসোরেরর যুদ্ধেও বেগম নবাবের পার্শ্বে ছিলেন॥ Riaz, p. 329)