পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
আলিবর্দীর বেগম
৮৩


পরামর্শ দিলেন। তিনি নবাবের হৃদয়দৌর্বল্যের যৎপরোনাস্তি নিন্দা করিয়া, যাহাতে তাহার মনে শত্রুদমনের ইচ্ছা বলবতী হয়, তজ্জন্য তাহাকে অবিরত প্রোৎসাহিত করিতে লাগিলেন। বেগমের উত্তেজনায় নবাব প্রবুদ্ধ হইয়া, আফগানদিগের দমনে কৃতসঙ্কল্প হইলেন এবং আপনার সৈন্যদিগকে আহ্বান করিয়া তাহাদিগের নিকট সমস্ত কথা ব্যক্ত করিলেন। অতঃপর তিনি তাহাদিগকে উৎসাহিত করিয়া, স্রোতস্বিনীর মহাপ্রবাহে ভাসমান মুষ্টিমেয় আফগান তৃণগুচ্ছকে ভাসাইবার জন্য প্রবলবেগে ধাবিত হইলেন। তাহার যুদ্ধ-কৌশলে অচিরাৎ আফগানগণ বিধ্বস্ত হইয়া গেল। নবাব আপনার কন্যা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণের উদ্ধার-সাধন করিয়া আফগানদিগের পরিবারগণের প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখাইয়া, যুগপৎ আপনার শৌর্য ও মহত্ত্বের পরিচয় প্রদান করিলেন। নবাব-বেগম যদি আলিবর্দী খাঁকে আফগানদিগের বিরুদ্ধে উত্তেজিত না করিতেন, তাহা হইলে, তিনি শোকে এত দূর অভিভূত হইয়া পড়িতেন যে, সহসা শত্রুদিগকে দমন করিতে পারিতেন কিনা সন্দেহ।

 নবাব-বেগম এইরূপ অনেক স্থলে নবাবের হৃদয়দৌর্বল্যের অপনোদন করিয়া, তাহাকে উৎসাহসহকারে কার্যে ব্রতী করিতেন। কি মহারাষ্ট্রীয় সমরে, কি আফগানযুদ্ধে সর্বত্রই তিনি উপস্থিত থাকিয়া নবাবকে নানারূপ পরামর্শ দিতেন এবং সময়ে সময়ে স্বয়ং অনেক কার্যের ভার লইয়া নবাবের কষ্টের ভার লঘু করিয়া তুলিতেন। যেখানে কোন গুরুতর কার্যে নবাব নিরুৎসাহপ্রায় হইতেন, নবাব-বেগম আপনি সেই স্থলে নবাবকে উত্তেজিত করিয়া সেই কার্যের জন্য তাহাকে উৎসাহিত করিতেন। নবাব আলিবর্দী খাঁর রাজত্বের অনেক ঐতিহাসিক ঘটন৷ এইরূপে নবাব-বেগমের সহিত গাঢ়ভাবে বিজড়িত রহিয়াছে। নবাব-বেগমের এই অসাধারণ প্রতিভার জন্য আলিবর্দী খা ঁরাজধানী হইতে তাহার অনুপস্থিতি কালে অনেক সময়ে বেগমের প্রতি রাজকার্যের ভার প্রদান করিতেন, তজ্জন্য তিনি বাদশাহদরবার হইতে আদেশ লইয়াছিলেন। এই সময় হইতে মুর্শিদাবাদের গদিনসীন-বেগমপদের সৃষ্টি হয়।

 নবাব আলিবর্দী খাঁর রাজনৈতিক জীবন যেরূপ অনেক পরিমাণে তাহার বেগমের সহায়তার উপর নির্ভর করিত, সেইরূপ তাহার প্রিয়তম দৌহিত্র সিরাজের জীবনও বাল্যকাল হইতে সেই আদর্শ মহিলার হস্তে গঠিত হইয়াছিল। সিরাজ শৈশবাবস্থা অবধি তাহাদের নিকট অবস্থিতি করিতেন এবং তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে মহারাষ্ট্রীয় ও আফগান সময়ে উপস্থিত থাকিয়া, অনেক-পরিমাণে সুশিক্ষিত ও কষ্টসহিষ্ণু হইয়াছিলেন। কিন্তু তাহার প্রকৃতি এরূপ চঞ্চল ও বিলাসপরায়ণ ছিল যে, আলিবর্দী খা ঁও নবাব-বেগমের সহস্র শিক্ষাসত্ত্বেও তাহ৷ একেবারে কুপথ পরিত্যাগ করিতে পারে নাই। তথাপি সিরাজের জীবনে আলিবর্দী ও তাহার বেগমের শিক্ষার অনেক সুফল দেখিতে পাওয়া যায়। তাহাদের শিক্ষাবলে অনেকস্থলে সিরাজ মহত্ত্বের পরিচয় দিয়াছেন। সিরাজ চঞ্চলপ্রকৃতি ও বিলাসপ্রিয় হইলেও ইতিহাসে তাহাকে যেরূপ