পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৮৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


শয়তানের অবতার বলিয়া চিত্রিত করা হয়, তিনি সেরূপ কলুষিত-প্রকৃতি ছিলেন না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। আদর্শ রাজনীতিবিদ আলিবর্দী ও তাহার প্রতিভাশালিনী মহিষীর স্বহস্তগঠিত সিরাজ-জীবন কদাচ একেবারে ঘৃণার্হ হইতে পারে না। স্থানান্তরে আমরা এ বিষয়ের আলোচনা করিব।

 ঐতিহাসিকেরা একটি ঘটনার জন্য সিরাজকে যৎপরোনাস্তি নিন্দা করিয়া থাকেন। কিন্তু তাহার কারণ জানিতে পারিলে, কেহই সিরাজকে তজ্জন্য বিশেষরূপে দোষী করিবেন না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। ঐতিহাসিকগণ কেবল সেই ভীষণ ঘটনাটি লোকসমক্ষে উপস্থিত করিয়া মনের আবেগে সিরাজকে নিন্দা করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু তাহার মূল অনুসন্ধান করিয়া দেখেন নাই; অথবা তাহা গোপন করিয়া সাধারণের চক্ষে ধূলি নিক্ষেপ করিয়াছেন। সাধারণ ইতিহাসপাঠকমাত্রেই অবগত আছেন যে, সিরাজউদ্দৌলা নৃশংসভাবে হোসেন কুলী খাঁর প্রাণবধ করিয়াছিলেন। কিন্তু ইহার কারণ কি, সম্ভবতঃ তাহা সকলের জানিবার সুযোগ ঘটে নাই। আমরা ইহার কারণ নির্দেশ করিতেছি। কারণটিও সেই নৃশংস হত্যা অপেক্ষা কোন অংশে অল্প গুরুতর নহে।

 আলিবর্দী খা ঁও তাহার বেগমের ন্যায় মহিল৷ যে-সংসারের কর্তা ও কীস্বরূপ ছিলেন, দুঃখের বিষয়, সেই সংসারে ব্যভিচার ও পাপ প্রবেশ করিয়া, তাহাদের হৃদয়ে সাদা সহস্র বৃশ্চিকদংশনের যন্ত্রণা প্রদান করিত। বলিতে দুঃখ ও লজ্জা বোধ হয় যে, আলিবর্দী খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটী ও আমিনা আপনাদিগের পবিত্র চরিত্র রক্ষা করিতে পারেন নাই। ঘসেটা অনেক দিন হইতে পাপপথে বিচরণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। জৈনুদ্দীনের মৃত্যুর পর আমিনাও ভগিনীর পথের অনুসরণ করেন। এই আমিনাই সিরাজের মাতা। দুই ভগিনীই হোসেনকুলী খাঁর প্রণয়ভাগিনী হইয়া উঠেন। হোসেনকুলী খা ঁঘসেটীর স্বামী ও আলিবর্দীর ভ্রাতুস্পুত্র নওয়াজেস মহম্মদ খার সহকারী ছিলেন। নওয়াজেস মহম্মদ খা ঁঢাকার শাসনকর্তৃত্বপদ লাভ করেন। তিনি বরাবরই হোসেনকুলী খাঁকে বিশ্বাস করিতেন ও ভালবাসিতেন। সেইজন্য হোসেনকুলী খা ঁঘসেটী বেগমের সহিত প্রণয় স্থাপন করিয়া, প্রভুর ভালবাসা ও বিশ্বাসের প্রতিশোধ দিয়াছিলেন। এই প্রণয় বহুদিন পর্যন্ত অক্ষুন্ন ছিল। কিন্তু অবশেষে ঘসেটী ও হোসেনকুলী খাঁর মধ্যে মনোবিবাদের সৃষ্টি হয়। এই মনোবিবাদের কারণই আমিনা বেগম। আমিনা স্বামীর মৃত্যুর পর মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইলে, হোসেনকুলী খা ঁতাহার সহিত প্রণয় স্থাপন করেন। এইজন্য তাহার উপর ঘসেটীর অত্যন্ত ক্রোধ উপস্থিত হয়। কন্যাগণের কুপথগমনের কথা জ্ঞাত হওয়া অবধি নবাব-বেগম তাহা নিবারণের জন্য অশেষরূপ চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কৃতকার্য হইতে পারেন নাই। কমে যখন তাহাদের গুপ্ত প্রণয়ের কথা লইয়া সমস্ত মুর্শিদাবাদে আন্দোলন উপস্থিত হইল, তখন নবাব-বেগম আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। বিশেষতঃ তাহার কনিষ্ঠা কন্যা পূর্বে সচ্চরিত্রা থাকিয়া এক্ষণে অধঃপাতের দিকে অগ্রসর