পাতা:মৃণালিনী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

... ." . যবনদূত—যমদূত বা } e \ যবনের নিষেধ না শুনিয়া মুক্ত দ্বারপথে প্রবেশ করিতে উষ্ঠত হইল। সৰ্ব্বাগ্রে একজন খৰ্ব্বকায়, দীর্ঘবাহু, কুরূপ যবন। দুর্ভাগ্যবশতঃ দৌবারিক তাহার গতিরোধজন্ত । শূলহস্তে তাহার সম্মুখে দাড়াইল। কহিল, “ফের—নচেৎ এখনই মারিব।” “আপনিই তবে মর।” এই বলিয়া ক্ষুদ্রাকার যবন দেীবারিককে নিজকরস্থ তরবারে ছিন্ন করিল। দেীবারিক প্রাণত্যাগ করিল। তখন আপন সঙ্গীদিগের মুখাবলোকন করিয়া ক্ষুদ্রকায় যবন কহিল, "এক্ষণে আপন আপন কাৰ্য্য কর।” আমনি বাক্যহীন ষোড়শ অশ্বারোহীদিগের মধ্য হইতে ভীষণ জয়ধ্বনি সমুথিত হইল। তখন সেই ষোড়শ যবনের কটিবন্ধ হইতে ষোড়শ অসিফলক নিস্কোষিত হইল এবং অশনিসম্পাতসদৃশ তাহার দৌবারিকদিগকে আক্রমণ করিল। দৌবারিকের রণসজ্জায় ছিল না—অকস্মাৎ নিরুদ্যোগে আক্রান্তু হইয়া আত্মরক্ষার কোন চেষ্টা করিতে পারিল না— মুহূৰ্ত্তমধ্যে সকলেই নিহত হইল। ক্ষুদ্রকায় যবন কহিল, “যেখানে যাহাকে পাও, বধ কর। পুরী অরক্ষিতা— বুদ্ধ রাজাকে বধ কর।” তখন যবনের পুরমধ্যে তাড়িতের ন্যায় প্রবেশ করিয়া বালবৃদ্ধবনিতা পৌর- , জন যেখানে যাহাকে দেখিল, তাহাকে অসি দ্বারা ছিন্নমস্তক, অথবা শূলাগ্রে বিদ্ধ করিল। পৌরজন তুমুল আৰ্ত্তনাদ করিয়া ইতস্ততঃ পলায়ন করিতে লাগিল। সেই ঘোর আৰ্ত্তনাদ, অন্তঃপুরে যথা বৃদ্ধ রাজা ভোজন করিতেছিলেন, তথা প্রবেশ করিল। তাহার মুখ শুকাইল। জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ঘটিয়াছে—যবন আসিয়াছে ?” পলায়নতৎপর পৌরজনের কহিল, “যবন সকলকে বধ করিয়া আপনাকে বধ করিতে আসিতেছে।” কবলিত অন্নগ্রাস রাজার মুখ হইতে পড়িয়া গেল। তাহার শুদ্ধশরীর জলস্রোতঃপ্ৰহত বেতসের স্থায় কঁাপিতে লাগিল। নিকটে রাজমহিষী ছিলেন–রাঞ্জা ভোজনপাত্রের উপর পড়িয়া যান দেখিয়া, মহিষী ৰ্তাহার হস্ত ধরিলেন ; কহিলেন, “চিন্তু নাই—আপনি উঠুন।" এই বলিয় তাহার হস্ত ধরিয়া তুলিলেন। রাজা কলের পুত্তলিকার স্থায় দাড়াইয়া উঠিলেন । মহিষী কহিলেন, “চিন্তা কি ? নৌকায় সকল দ্রব্য গিয়াছে, চলুন, আমরা খিড়কী দ্বার দিয়া সোশারগ। যাত্রা করি।" . . . . x - + - - - z :