পাতা:মৃণালিনী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা কহিলেন, “কি আজ্ঞা করিতেছেন ? সকল কথা বর্ষীয়ান রাজার শ্রুতিস্থলভ হয় নাই। মাধবাচার্য্যের পুনরুক্তির প্রতীক্ষা না করিয়া ধৰ্ম্মাধিকার পশুপতি কহিলেন, “মহারাজাধিরাজ ! মাধবাচার্ষ্য রাজসমীপে জিজ্ঞাসু হইয়াছেন যে, রাজশক্রদমনের কি উপায় হইয়াছে। বঙ্গেশ্বরের কোন শক্র এ পর্য্যন্ত দমিত হয় নাই, তাহা এখনও আচাৰ্য্য ব্যক্ত করেন নাই। তিনি সবিশেষ বাচন করুন।” মাধবাচাৰ্য্য অল্প হাস্ত করিয়৷ এবার অত্যুচ্চস্বরে কহিলেন, “মহারাজ, তুরকীয়ের আর্য্যাবৰ্ত্ত প্রায় সমুদয় হস্তগত করিয়াছে। আপাততঃ তাহারা মগধ জয় করিয়া গৌড়রাজ্য আক্রমণের উদ্যোগে আছে।” এবার কথা রাজার কর্ণে প্রবেশলাভ করিল। তিনি কহিলেন, “তুরকীদিগের কথা বলিতেছেন ? তুরকীয়েরা কি আসিয়াছে ?” মাধবাচাৰ্য্য কহিলেন, “ঈশ্বর রক্ষা করিতেছেন ; এখনও তাহারা এখানে আসে নাই। কিন্তু আসিলে আপনি কি প্রকারে তাহাদিগের নিবারণ করিবেন ?” । রাজা কহিলেন, “আমি কি করিব-আমি কি করিব? আমার এই প্রাচীন শরীর, আমার যুদ্ধের উদ্যোগ সম্ভবে না। আমার এক্ষণে গঙ্গালাভ হইলেই হয়। তুরকীয়ের আসে আসুক।” এবস্তৃত রাজবাক্য সমাপ্ত হইলে সভাস্থ সকলেই নীরব হইল। কেবল মহাসামন্তে । কোষমধ্যস্থ অসি অকারণ ঈষৎ ঝনৎকার শব্দ করিল। অধিকাংশ শ্রোতৃবর্গের মুখে কোন ভাবই ব্যক্ত হইল না। মাধবাচার্য্যের চক্ষু হইতে একবিন্দু অশ্রুপাত হইল। সভাপণ্ডিত দামোদর প্রথমে কথা কহিলেন, “আচাৰ্য্য, আপনি কি ক্ষুব্ধ হইলেন ? যেরূপ রাজাজ্ঞা হইল, ইহা শাস্ত্রসঙ্গত । শাস্ত্রে ঋষিবাক্য প্রযুক্ত আছে যে, তুরকীয়েরা এ দেশ অধিকার করিবে। শাস্ত্রে আছে অবশু ঘটিবে-কাহার সাধ্য নিবারণ করে ? তবে যুদ্ধোন্তমে প্রয়োজন কি ?” মাধবাচাৰ্য্য কহিলেন, “ভাল সভাপণ্ডিত মহাশয়, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, আপনি এতদ্বক্তি কোন শাস্ত্রে দেখিয়াছেন ?” দামোদর কহিলেন, “বিষ্ণুপুরাণে আছে, যথা—” মাধ। যথা থাকুক—বিষ্ণুপুরাণ আনিতে অনুমতি করুন ; দেখান এরূপ উক্তি কোথায় আছে ?