পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
মৃণালিনী।

আমি-গৃহে চলিলাম আমার আর থাকা উচিত নহে। তুমি এই পল্লীতে থাক, হেমচন্দ্র কেমন থাকেন সম্বাদ লইয়া যাইও। মনােরমা যেই হউক, হেমচন্দ্র আমারই।”

 কে বলে সমুদ্রতলে রত্ন জন্মে? এ সংসারে রত্ন রমণীর হৃদয়।


তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
হেতু—ধূমাৎ।

 মনোরমা এবং হেমচন্দ্র গৃহ মধ্যে প্রবেশ করিলে মৃণালিনীকে বিদায় দিয়া গিরিজায় উপবন গৃহ প্রদক্ষিণ করিতে লাগিলেন। যেখানে যেখানে বাতায়নপথ মুক্ত দেখিলেন, সেই খানে সাবধানে মূখ উন্নত করিয়া গৃহমধ্যে দৃষ্টিপাত করিলেন। এক কক্ষে হেমচন্দ্রকে শয়ানাবস্থায় দেখিতে পাইলেন; দেখিলেন তাঁহার শয্যোপরি মনােরমা বসিয়া আছে। গিরিজায়া সেই বাতায়নতলে উপবেশন করিলেন। পূর্ব্বরাত্রে সেই বাতায়ন পথে যবন হেমচন্দ্রকে দেখা দিয়াছিল।

 বাতায়নতলে উপবেশনে গিরিজায়ার অভিপ্রায় এই ছিল যে, হেমচন্দ্র মনােরমায় কি কথােপকথন হয়, তাহা বিরলে থাকিয়া শ্রবণ করেন। কিন্তু হেমচন্দ্র নিদ্রাগত, কোন কথোপকথনই ত হয় না। একাকী নীরবে সেই বাতায়নতলে বসিয়া গিরিজায়ার বড়ই কষ্ট হইল। কথা কহিতে পারেন না, হাসিতে পারেন না, ব্যঙ্গ করিতে পারেন না, বড়ই কষ্ট—স্ত্রী রসনা কণ্ডূয়িত হইয়া উঠিল মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন—সেই