পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৫

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।


“আমি ত উন্মাদিনী”

 অপরাহ্নে মাধবাচার্য্য প্রত্যাবর্ত্তন করিলেন। তিনি সম্বাদ আনিলেন, যে, ধর্ম্মাধিকার প্রকাশ করিয়াছেন যে, যবনসেনা আসিয়াছে বটে, কিন্ত পুর্ব্বজিত রাজ্যে বিদ্রোহের সম্ভাবনা শুনিয়া যবনসেনাপতি সন্ধিসংস্থাপনে ইচ্ছুক হইয়াছেন। আগামী কল্য তাঁহারা দূত প্রেরণ করিবেন। দূতের আগমন সাপেক্ষ কোন যুদ্ধোদ্যম হইতেছে না। এই সম্বাদ দিয়া মাধাবচার্য্য কহিলেন, “এই কুলাঙ্গার রাজা ধর্ম্মাধিকারের বুদ্ধিতে নষ্ট হইবে।”

 কথা হেচন্দ্রের কর্ণে প্রবেশলাভ করিল কি না সন্দেহ। তাঁহাকে বিমনা দেখিয়া মাধবাচার্য্য বিদায় হইলেন।

 সন্ধ্যার প্রাক্কালে মনোরমা, হেমচন্দ্রের গৃহে প্রবেশ করিলেন। হেমচন্দ্রকে দেখিয়া মনোরম! কহিলেন,

 “ভ্রাতঃ তোমার ললাট কুঞ্চিত; তোমার ভ্রূকুটীকুটিল বিস্ফারিত লোচনে পলক নাই; লোচনযুগল—দেখি—তাই ত চক্ষু আর্দ্র; তুমি রোদন করিয়াছ।”

 হেমচন্দ্র মনোরমার মুখপ্রতি চাহিয়া দেখিলেন; আবার চক্ষু অবনত করিলেন; পুনর্ব্বার উন্নত গবাক্ষপথে দৃষ্টি করিলেন; আবার মনোরমার মুখপ্রতি চাহিয়া রহিলেন। মনোরমা বুঝিলেন যে দৃষ্টির এইরূপ গতির কোন উদ্দেশ্য নাই। যখন কথা কণ্ঠাগত, অথচ বলিবার নহে, তখনই দৃষ্টি এইরূপ হয়। মনোরমা কহিলেন,