পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
মৃণালিনী।

 ক্ষণেক পরে গিরিজায়া মৃণালিনীর হস্ত ধীরে ধীরে নিজ স্কন্ধচ্যুত করিয়া চলিলেন।


নবম পরিচ্ছেদ।


অমৃতে গরিল—গরলামৃত।

 হেমচন্দ্র আচার্য্যের কথায় বিশ্বাস করিয়া মৃণালিনীকে দুশ্চরিত্রা বিবেচনা করিয়াছিলেন; মৃণালিনীর পত্র পাঠ না করিয়া তাহা ছিন্ন ভিন্ন করিয়াছিলেন, তাঁহার দূতীকে বেত্রাঘাত করিতে প্রস্তুত হইয়াছিলেন। কিন্তু ইহা বলিয়া তিনি মৃণালিনীকে ভাল বাসিতেন না, তাহা নহে। মৃণালিনীর জন্য তিনি রাজ্যত্যাগ করিয়া মথুরাবাসী হইয়াছিলেন। এই মৃণালিনীর জন্য গুরুর প্রতি শরসন্ধান করিতে প্রস্তুত হইয়াছিলেন, মৃণালিনীর জন্য গৌড়ে নিজব্রত বিস্মৃত হইয়া ভিখারিণীর তোষামোদ করিয়া ছিলেন। আর এখন? এখন, হেমচন্দ্র মাধবাচার্য্যকে শূল। দেখাইয়া বলিয়াছিলেন, “মৃণালিনীকে এই শূলে বিদ্ধ করিব?” কিন্তু তাই বলিয়া কি, এখন তাহার স্নেহ একেবারে ধ্বংস প্রাপ্ত হইয়াছিল? স্নেহ কি এক দিনে ধ্বংস হইয়া থাকে? বহুদিন অবধি পার্ব্বতীয় বারি পৃথিবী হৃদয়ে বিচরণ করিয়া আপন গতিপথ খোদিত করে, এক দিনের সূর্য্যাতপে কি সে নদী শুকায়? জলের যে পথ খোদিত হইয়াছে, জল সেই পথেই যাইবে, সে পথ রোধ কর, পৃথিবী ভাসিয়া যাইবে। হেমচন্দ্র সেইরাত্রে, নিজ শয়ন কক্ষে, শয্যোপরি শয়ন করিয়া সেই মুক্ত বাতায়ন সন্নিধানে মস্তক রাখিয়া, বাতায়নপথে দৃষ্টি করিতেছিলেন—