পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অমৃতে গরল—গরলামৃত।
১৩৫

বলিয়াছিলে তিনি নবদ্বীপে আসিয়াছেন? নবদ্বীপে আসিয়াছেন কেন? আমি তাঁহার পত্র না পড়িয়া ভাল করি নাই।”

 গি। “মৃণালিনী নবদ্বীপে আপনাকে দেখিতে আসিয়াছেন।”

 হেমচন্দ্রের শরীর কণ্টকিত হইল। এই মৃণালিনীকে কুলটা বলিয়া অপমানিত করিয়াছেন? তিনি পুনরপি গিরিজায়াকে কহিলেন “মৃণালিনী কোথায় আছেন?”

 গি। “তিনি আপনার নিকট জন্মের শোধবিদায় লইতে আসিয়াছেন। সরোবরতীরে দাঁড়াইয়া আছেন। আপনি আসুন।”

 এই বলিয়া গিরিজায়া চলিয়া গেল। হেমচন্দ্র তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইলেন।

 গিরিজায়া বাপীতীরে, যথায় মৃণালিনী সোপানোপরি বসিয়া ছিলেন, তথায় উপনীত হইলেন। হেমচন্দ্র ও তথায় আসিলেন। গিরিজায়া কহিল, “ঠাকুরাণি! গাত্রোত্থান কর। রাজপুত্র আসিয়াছেন।”

 মৃণালিনী উঠিয়া দাঁডাইলেন। উভয়ে উভয়ের মুখ নিরীক্ষণ করিলেন। মৃণালিনীর দৃষ্টি লোপ হইল; অশ্রুজলে চক্ষু পূরিয়া গেল। অবলম্বন শাখা ছিন্ন হইলে যেমন শাখাবিলম্বিনী লতা ভূতলে পড়িয়া যায়, মৃণালিনী সেইরূপ হেমচন্দ্রের পদমূলে পতিত হইলেন। গিরিজায়া অন্তরে গেল।


ঠ২