পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
মৃণালিনী।

দশম পরিচ্ছেদ।


এত দিনের পর।

 হেমচন্দ্র মৃণালিনীকে হস্ত ধরিয়া তুলিলেন। উভয়ে উভয়ের সম্মুখীন হইয়া দাঁড়াইলেন।

 এত কাল পরে, দুই জনের সাক্ষাৎ হইল। যে দিন প্রদোযকালে, যমুনার উপকূলে, নৈদাঘানিলসন্তাড়িত বকুলতলে দাঁড়াইয়া, নীলাম্বুময়ীর চঞ্চম তরঙ্গশিরে নক্ষত্ররশ্মির প্রতিবিম্ব নিরীক্ষণ করিতে করিতে উভয়ে উভয়ের নিকট সজলনয়নে বিদায় গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহার পর এই সাক্ষাৎ হইল। নিদাঘের পর বর্ষা গিয়াছে বর্ষার পর শরৎ যায়, কিন্তু ইহাদিগের হৃদয়মধ্যে যে কত দিন গিয়াছে তাহা কি ঋতু গণনায় গণিত হইতে পারে?

 সেই নিশীথ সময়ে, স্বচ্ছসলিলা বাপীতীরে, দুইজনে পরস্পর সম্মুখীন হইয়া দাঁড়াইলেন। চারিদিকে, সেই নিবীড় বন, ঘনবিন্যস্ত লতাস্রগ্‌বিশোভী বিশাল বিটপী সকল দৃষ্টিপথ রুদ্ধ করিয়া দাঁড়াইয়াছিল; সম্মুখে নীলনীরদ খণ্ডবৎ দীর্ঘিকা শৈবাল-কুমুদ-কহলার সহিত বিস্তৃত রহিয়াছিল। শিরোপরে, চন্দ্র-নক্ষত্র-জলদ সহিত আকাশ আলোকে হাসিতেছিল। চন্দ্রালোক, আকাশে, বৃক্ষশিরে, লতাপল্লবে, বাপীসোপানে, নীলজলে, সর্ব্বত্র হাসিতেছিল। প্রকৃতি স্পন্দহীনা, ধৈর্যময়ী। সেই ধৈর্য্যময়ী প্রকৃতির প্রসাদ মধ্যে, মৃণালিনী, হেমচন্দ্র, মুখে মুখে দাঁড়াইলেন।

 ভাষার কি শব্দ ছিল না? তাহাদিগের মনে কি বলিবার