পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
মৃণালিনী।

পর বুঝি এ অন্ধ কার পুরী আলো হইল—যদি জগদম্বা অনুকূলা হয়েন তবে মনোরমা এ অন্ধকার ঘুচাইবে।”

 এই রূপ ভাবিতে ভাবিতে পশুপতি, শয়নের পূর্ব্বে অষ্টভূজাকে নিয়মিত প্রণামবন্দনাদির জন্য দেবীমন্দিরে প্রবেশ করিলেন। প্রবেশ করিয়া দেখিলেন যে তথায় মনোরমা বসিয়া আছেন।

 পশুপতি কহিলেন “মনোরমা কখন আসিলে?”

 মনোরমা পূজাবশিষ্ট পুষ্পগুলিন লইয়া বিনাসূত্রে মালা গাঁথিতে ছিলেন। কথার কোন উত্তর দিলেন না। পশুপতি কহিলেন, “আমার সঙ্গে কথা কও। যতক্ষণ তুমি থাক ততক্ষণ সকল যন্ত্রণা বিস্মৃত হই।”

 মনোরমা মুখ তুলিয়া চাহিয়া দেখিলেন। পশুপতির মুখ প্রতি চাহিয়া রহিলেন, ক্ষণেক পরে কহিলেন, “আমি তোমাকে কি বলিতে আসিয়াছিলাম, কিন্তু তাহা আমার মনে হইতেছে॥”

 পশুপতি কহিলেন, “তুমি মনে কর। আমি অপেক্ষা করিতেছি।”

 পশুপতি বসিয়া রহিলেন, মনোরমা মালা গাঁথিতে লাগিলেন।

 অনেকক্ষণ পরে পশুপতি কহিলেন, আমারও কিছু বলিবার আছে। মনোযোগ দিয়া শুন। আমি এ বয়স্ পর্য্যন্ত কেবল বিদ্যোপার্জ্জন করিয়াছি—বিষয়ালোচনা করিয়াছি, অর্থেপার্জ্জন করিয়াছি; সংসার ধর্ম্ম করি নাই। যাহাতে অনুরাগ তাহাই করিয়াছি, দারপরিগ্রহে বিরাগ, এজন্য তাহা করি নাই। কিন্তু যে পর্য্যন্ত তুমি আমার নয়নপথে আসিয়াছ সেই পর্য্যন্ত মনোরমা লাভ আমার এক মাত্র ধ্যান স্বরূপ হইয়াছে। সেই লাভের