পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৮
মৃণালিনী।

 ম। “আমি জানি কেশবের কন্যা কোথায়—বলিব?”

 পশুপতি অবাক্ হইয়া মনোরমার মুখপ্রতি চাহিয়া রহিলেন। মনোরমা বলিতে লাগিলেন,

 এক জন জ্যোতির্ব্বিদ গণনা করিয়া বলিয়াছিল যে কেশবের কন্যা অল্পবয়সে বিধবা হইয়া স্বামীর অনুমৃতা হইবেন। কেশব এই কথায়, অল্পকালে কন্যার বিয়োগ শঙ্কা করিয়া অত্যন্ত দুঃখিত হইয়াছিলেন। তিনি ধর্ম্মনাশ ভয়ে অগত্যা কন্যাকে পাত্রস্থা করিলেন, কিন্তু বিধিলিপি খণ্ডাইবার ভরসায় বিবাহের রাত্রেই কন্যা লইয়া প্রয়াগধামে পলায়ন করিলেন। তাঁহার অভিলাষ এই ছিল যে তাঁহার কন্যা স্বামীর মৃত্যু সম্বাদ কস্মিন্‌কালে না পাইতে পারেন। দৈবাধীন কিয়ৎকাল পরে প্রয়াগে কেশবের মৃত্যু হইল। তাঁহার কন্যা পূর্ব্বেই মাতৃহীনা হইয়াছিল—এক্ষণে মৃতুকালে কেশব হৈমবতীকে উপাধ্যায়ের হস্তে সমর্পণ করিয়া গেলেন। মৃত্যুকালে কেশব উপাধ্যায়কে এই কথা বলিয়া গেলেন, ‘গুরো!—এই অনাথা কন্যাকে আপন গৃহে রাখিয়া প্রতিপালন করিবেন। ইহার স্বামী পশুপতি—কিন্তু জ্যোতির্ব্বিদেরা বলিয়া গিয়াছেন যে ইনি অল্পবয়সে স্বামীর অনুমৃতা হইবেন। অতএব আপনি আমার নিকট প্রতিশ্রুত হউন, যে এই কন্যাকে কখন জ্ঞাত করাইবেন না যে পশুপতি ইহার স্বামী। অথবা পশুপতিকে কখন জানাইবেন না যে ইনি তাঁহার পত্নী।”

 উপাধ্যায় তদ্রূপ প্রতিশ্রুত হইলেন। সেই পর্য্যন্ত তিনি তাহাকে পরিবারস্থা করিয়া প্রতিপালন করিয়া তোমার সহিত বিবাহের কথা গোপন করিয়াছেন।”

 প। “এখন সে কন্যা কোথায়?”