পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
মৃণালিনী।

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “তাহার অল্পই সম্ভাবনা।”

 মাধবাচার্য্য কহিলেন, “জ্যোতিষী গণনা মিথ্যা হইবার নহে। অবশ্য সফল হইবে। তবে আমার এক ভ্রম হইয়া থাকিবে। পূর্ব্বদেশে যবন পরাভূত হইবে—ইহাতে আমরা বঙ্গেই যবন জয় করিবার প্রত্যাশা করিয়াছিলাম। কিন্তু বঙ্গ রাজ্য ত প্রকৃত পূর্ব্ব নহে—কামরূপই পূর্ব্ব। বোধ হয় তথায়ই আমাদিগের আশা ফলবতী হইবে।”

 হে। “কিন্তু এক্ষণে ত যবনের কামরূপ গমনের কোন সম্ভাবনা দেখি না।”

 মা। “এই যবনেরা ক্ষণকাল স্থির নহে। সুস্থির হইলেই কামরূপ আক্রমণ করিবে।”

 হে। “তাহাও মানিলাম। এবং ইহারা যে কামরূপ আক্রমণ করিলে পরাজিত হইবে তাহাও মানিলাম। কিন্তু তাহা হইলে আমার পিতৃরাজ্যোদ্ধারের কি সদুপায় হইল?”

 মা। “এই যবনেরা এ পর্য্যন্ত পুনঃ পুনঃ জয়লাভ করিয়া অজেয় বলিয়া রাজগণমধ্যে প্রতিপন্ন হইয়াছে। ভয়ে কেহ তাহাদিগের বিরোধী হইতে চাহে না। তাহারা এক বার মাত্র পরাজিত হইলে তাহাদিগের সে মহিমা আর থাকিবে না। তখন ভারতবর্ষীয় তাবৎ আর্য্যবংশীয় রাজারা ধৃতাস্ত্র হইয়া উঠিবেন। সকলে এক হইয়া অস্ত্র ধারণ করিলে যবনেরা কত দিন তিষ্ঠিবে?”

 হে। “গুরুদেব! আপনি আশামাত্রের আশ্রয় লইতেছেন —আমিও তাহাই করিলাম। এক্ষণে আমি কি করিব-আজ্ঞা করুন।”

 মা। “আমিও তাহাই চিন্তা করিতেছিলাম। এ নগর মধ্যে তোমার আর অবস্থিতি করা অকর্ত্তব্য; কেন না যবনের”