পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
মৃণালিনী।

হার যথাসাধ্য প্রায়শ্চিত্ত করিলাম। গঙ্গাতীরে তরণী প্রস্তুতা আছে―আপনি যথেষ্ট স্থানে প্রস্থান করুন। আমি এইখান হইতে বিদায় হই।”

 পশুপতি বিস্ময়াপন্ন হইয়া অবাক্‌ হইয়া রহিলেন। মহম্মদআলি পুনরপি কহিতে লাগিলেন, “আপনি এই সাবশেষা রজনীমধ্যে এ নগরী ত্যাগ করিবেন। নচেৎ কল্য প্রাতে যবনের সহিত আপনার সাক্ষাৎ হইলে প্রমাদ ঘটিবে। খিলিজির আজ্ঞার বিপরীতাচরণ করিলাম―ইহার সাক্ষী এই প্রহরী। সুতরাং আত্মরক্ষার জন্য ইহাকেও দেশান্তরিত করিলাম। ইহাকেও আপনার নৌকায় লইয়া যাইবেন।”

 এই বলিয়া মহম্মদআলি বিদায় হইলেন। পশুপতি কিয়ৎকাল বিস্ময়াপন্ন হইয়া থাকিয়া গঙ্গাতীরাভিমুখে চলিলেন।


চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ।


ধাতুমূর্ত্তির বিসর্জ্জন।

 মহম্মদআলির নিকট বিদায় হইয়া, রাজপথ অতিবাহিত করিয়া পশুপতি ধীরে ধীরে চলিলেন। ধীরে ধীরে চলিলেন―যবনের কারাগার হইতে বিমুক্ত হইয়াও দ্রুতপদক্ষেপণে তাঁহার প্রবৃত্তি জন্মিল না। রাজপথে যাহা দেখিলেন, তাহাতে আপনার মনোমধ্যে আপনি মরিলেন। তাঁহার প্রতিপদে মৃত নাগরিকের দেহ চরণে বাজিতে লাগিল; প্রতিপদে শোণিতসিক্ত কর্দ্দমে চরণ আর্দ্র হইতে লাগিল। পথের দুই পার্শ্বে গৃহাবলী জনশূন্য―বহুগৃহ ভস্মীভূত; কোথাও বা তপ্ত অঙ্গার এখনও জ্বলিতেছিল। গৃহান্তরে দ্বার ভগ্ন―গবাক্ষ ভগ্ন―প্রকোষ্ঠ