পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কুসুমনির্ম্মিতা।
৫৭
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।
কুসুমনির্ম্মিতা।

 উপনগর প্রান্তে, গঙ্গাতীরবর্ত্তি এক অট্টালিকা হেমচন্দ্রের বাসার্থে রাজপুরুষেরা নির্দ্দিষ্ট করিলেন। হেমচন্দ্র মাধবাচার্য্যের পরামর্শানুসারে সুরম্য অট্টালিকায় আবাস সংস্থাপিত করিলেন।

 নবদ্বীপে জনার্দ্দন নামে এক বধির বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বাস করিতেন। তিনি বয়োবাহুল্য প্রযুক্ত এবং শ্রবণেন্দ্রিয়ের হানিপ্রযুক্ত সর্ব্বতোভাবে অসমর্থ। অথচ নিঃসহায়। তাহার সহধর্ম্মিণীও প্রাচীনা এবং শক্তিহীনা। কিছু দিন হইল ইহাদিগের পর্ণকুটীর প্রবল বাত্যায় বিনাশ প্রাপ্ত হইয়াছিল। সেই অবধি ইহারা আশ্রয়ভাবে এই বৃহৎ পূরীর এক পার্শ্বে রাজপুরুষদিগের অনুমতি লইয়া বাস করিতে ছিল। এক্ষণে কোন রাজপুত্ত্র আসিয়া তথায় বাস করিবেন শুনিয়া তাহারা পরাধিকার ত্যাগ করিয়া বাসান্তরের অন্বেষণে যাইবার উদ্যোগ করিতেছিল।

 হেমচন্দ্র ইহা শুনিয়া দুঃখিত হইলেন। বিবেচনা করিলেন যে এই বৃহৎ ভবনে আমাদিগের উভয়েরই স্থান হইতে পারে। ব্রাহ্মণ কেন নিরাশ্রিত হইবেন? হেমচন্দ্র দিগ্বিজয়কে আজ্ঞা করলেন, যে ব্রাহ্মণকে গৃহত্যাগ করিতে নিবারণ কর। ভৃত্য ঈষৎ হাস্য করিয়া কহিল “এ কার্য্য ভৃত্য দ্বারা সম্ভব না। ব্রাহ্মণঠাকুর আমার কথা কাণে তুলেন না।”

 ব্রাহ্মণ বস্তুতঃ অনেকেরই কথা কাণে তুলেন না—কেন না তিনি বধির। হেমচন্দ্র ভাবিলেন ব্রাহ্মণ অভিমান প্রযুক্ত ভৃত্যের আলাপ গ্রহণ করেন না। এজন্য স্বয়ং তৎসম্ভাষণে গেলেন। ব্রাহ্মণকে প্রণাম করিলেন।