পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
মৃণালিনী।

দত্ত যোদ্ধৃবেশে আপাদমস্তক আত্মশরীর মণ্ডিত করিলেন। অকাল-জলদোদয় বিমর্ষিত গগনমণ্ডলবৎ তাঁহার সুন্দর মুখকান্তি অন্ধকারময় হইল। তিনি একাকী সেই গভীর নিশাতে শস্ত্রময় হইয়া যাত্রা করিলেন। বাতায়ন পথে মনুষ্য মুণ্ড দেখিয়া তিনি জানিতে পারিয়াছিলেন যে বঙ্গে যবন আসিয়াছে।


পঞ্চম পরিচ্ছেদ।


বাপীকূলে।

 অকাল জলদোদয় স্বরূপ ভীম মূর্ত্তি রাজপুত্র হেমচন্দ্র যবনান্বেষণে নিষ্কন্ত হইলেন। ব্যাঘ্র আহার্য্য দেখিবামাত্র বেগে ধাবিত হয়, হেমচন্দ্র যবন দেখিবামাত্র সেইরূপ ধাবিত হইলেন। কিন্তু কোথায় যবনের সাক্ষাৎ পাইবেন তাহার স্থিরতা ছিল না।

 হেমচন্দ্র একটা মাত্র যবন দেখিয়াছিলেন। কিন্তু তিনি এই সিদ্ধান্ত করিলেন, যে হয় যবন সেনা নগর সন্নিধানে উপস্থিত হইয়া লুক্কায়িত আছে নতুবা এই ব্যক্তি যবন সেনার পূর্ব্বচর। যদি যবন সেনাই আসিয়া থাকে, তবে তৎসঙ্গে একাকী সংগ্রাম সম্ভবে না। কিন্তু যাহাই হউক, প্রকৃত অবস্থা কি তাহার অনুসন্ধান না করিয়া হেমচন্দ্র কদাচ স্থির থাকিতে পারেন না। যে মহংকার্য্য জন্য মৃণালিনীকে ত্যাগ করিয়াছেন, অদ্য রাত্রে নিদ্রা ভিভূত হইয়া সে কর্ম্মে উপেক্ষা করিতে পারেন না। বিশেষ যবনবধে হেমচন্দ্রের অন্তরিক আনন্দ। উষ্ণীযধারী মুণ্ড দেখিয়া অবধি তাঁহার জিঘাংসা ভয়ানক প্রবল হইয়াছে সুতরাং তিনি হির হইবার সম্ভাবনা কি? অতএব দ্রুতপদ বিক্ষেপে হেমচন্দ্র রাজপথাভিমুখে চলিলেন।