পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬

নবম পরিচ্ছেদ।


মোহিতা।

 পশুপতি অতৃপ্ত নয়নে দেখিতে লাগিলেন। দেখিতে দেখিতে মনোরমার সৌন্দর্য্য-সাগরের এক অপূর্ব্ব মহিমা দেখিতে পাইলেন। যেমন সূর্য্যের প্রখর করমালায় হাস্যময় অম্বুরাশি মেঘ সঞ্চারে ক্রমে ক্রমে গম্ভীর কৃষ্ণ কান্তি প্রাপ্ত হয়, তেমনি পশুপতি দেখিতে দেখিতে মনোরমার সৌকুমার্য্যময় মুখমণ্ডল গম্ভীর হইতে লাগিল। আর সে বালিকা সুলভ ঔদার্য্য-ব্যঞ্জক ভাব রহিল না। অপূর্ব্ব তেজোভিব্যক্তির সহিত, প্রগল্ভ বয়সের ও দুর্লভ গাম্ভীর্য্য তাহাতে বিরাজ করিতে লাগিল। পশুপতি কহিলেন, “মনোরমে, এত রাত্রে কেন আসিয়াছ?—এ কি? আজি তোমার এ ভাব কেন?”

 মনোরমা উত্তর করিলেন, “আমার কি ভাব দেখিলে?”

 প। “তোমার দুই মূর্ত্তি—এক মূর্ত্তি আনন্দময়ী, সরলা, বালিকা—সে মুর্ত্তিতে কেন আসিলে না—সেই রূপে আমার হৃদয় শীতল হয়। আর তোমার এই মূর্ত্তি—গম্ভীরা, তেজস্বিনী, প্রখর বুদ্ধিশালিনী—সেমূর্ত্তি দেখিলে আমি ভীত হই। তখন বুঝিতে পারি, যে তুমি কোন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছ। আজি তুমি এ মূর্ত্তিতে আমাকে ভয় দেখাইতে কেন আসিয়াছ?”

 ম। “পশুপতি, তুমি এত রাত্রি জাগরণ করিয়া কি করিতেছ?”

 প। “আমি রাজকার্য্যে ব্যস্ত ছিলাম—কিন্তু তুমি—”

 ম। “পশুপতি, আবার? রাজ কার্য্যে না আত্মকার্য্যে?”