মেঘনাদ বিবিধ সদ্গুণে ভূষিত হইয়াও সর্ব্বথা দোষশূন্য নহে। মেঘনাদের দুই এক স্থলে গ্রাম্যতা ও স্থলবিশেষে ক্লিষ্টতা প্রভৃতি কএকটী দোষ দেখিতে পাওয়া যায়। আমি ইতিপূর্ব্বেই ঐরূপ দোষ ঘটিবার অপরিহার্য্য কারণ প্রদর্শন করিয়াছি। এক্ষণে আমার বক্তব্য এই, যে উক্ত প্রকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দোষ সত্বেও মেঘনাদ বাঙ্গালা ভাষার যে একখানি অত্যুৎকষ্ট মহাকাব্য তাহার সন্দেহ নাই। অম্মদ্দেশীয় সুবিচক্ষণ গুণগ্রাহী পাঠকেরাও একথা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিয়া থাকেন ও কেহ কেহ মেঘনাদকারকে, বিদ্যাসুন্দর প্রণেতা ভারতচন্দ্র অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ কবি বলিয়া গণনা করিতেও সঙ্কুচিত হয়েন না আমি তাহাদের এই প্রশংসাবাদ অত্যুক্তি বলিতে পারি না। মেঘনাদ সম্পূর্ণরূণে ঐরূপ প্রশংসার যোগ্য সন্দেহ নাই।
এ পর্য্যন্ত ভূমণ্ডলে যত কবি প্রাদুর্ভূত হইয়াছেন, তাঁহাদের মধ্যে প্রায় অনেকেই অসমকালে সবিশেষ খ্যাতি প্রতিপত্তিলাভ করিতে পারেন নাই। যে মিল্টন এক্ষণে বিশ্ববিখ্যাত হইয়াছেন, সভ্যদেশমাত্রেই যাঁর নাম অবিনশ্বর হইয়া রহিয়াছে, খ্রীষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্ব্বে সেই মিল্টনেরও অসাধারণ কবিত্বশক্তি বিশ্বজনীন অঙ্গীকৃত হয় নাই।