পাতা:মেঘ-মল্লার - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 ce-arts রামচন্দ্র রায় এবং রাজা লক্ষ্মণ-মাণিক্যের সঙ্গে গঞ্জালেসের কয়েক বৎসর ধরে শক্রতা চ’লে আসছে, এ অবস্থায় গঞ্জালেস যে তঁদের পত্তদিনার নরনারায়ণ রায়ের সঙ্গে যোগ দেবে-এ কীৰ্ত্তি রায়ের কাছে সম্পূর্ণ অপ্ৰত্যাশিত ঘটনা। তা হ’লেও, কীৰ্ত্তি রায়ের গড় থেকেও তোপ চলল । গঞ্জালেস। সুদক্ষ নৌ-বীর। তার পরিচালনে দশখানা সুলুপ চড়া ঘুরে গড়ের পাশের ছোট খালে ঢুকতে গিয়ে কীৰ্ত্তি রায়ের নওয়ারার এক অংশ দ্বারা বাধা প্ৰাপ্ত হ’ল। গড়ের কামান সেদিকে এত প্রখর যে খালের মুখে দাড়িয়ে থাকলে বহর মারা পড়ে। গঞ্জালেস দু’খানা ছোট কামান-বাহী স্থলুপ ছোট খালের মুখে রেখে বাকীগুলো সেখান থেকে ঘুরিয়ে এনে চড়ার পিছনে দাড় করালে । গঞ্জালেসের অধীনস্থ অন্যতম জলদসু্যা-মাইকেল রোজারিও ডি ভেগা-এই ছোট বহর খালের মধ্যে ঢুকিয়ে গড়ের পশ্চিমদিক আক্রমণ করবার জন্যে আদিষ্ট হ’ল । অতর্কিত আক্রমণে কীৰ্ত্তি রায়ের নওয়ার শত্ৰু-বহার কর্তৃক ছিপি-আঁাটা বোতলের মতন খালের মধ্যে আটকে গেল-বার নদীতে গিয়ে যুদ্ধ দেবার ক্ষমতা তাদের আদৌ রইল না। তবুও তাদের বিক্রমে রোজারিও অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত কিছু ক'রে উঠতে পারলে না। কীৰ্ত্তি রায়ের নৌ-বাহুর দুৰ্বল ছিল না, কীৰ্ত্তি রায়ের গড় থেকে পর্তুগীজ জলদস্যদের আড্ডা। সদ্বীপ খুব দূরে নয়, কাজেই কীৰ্ত্তি রায়কে নৌ-বহয় সুদৃঢ় ক’রে গড়তে হয়েছিল। বৈকালের দিকে রোজারিওর কামানের মুখে গড়ের পশ্চিম দিকটা একেবারে হুমুড়ি খেয়ে পড়ে গেল। - নরনারায়ণ রায় দেখলেন প্ৰায় ত্ৰিশখানা কোষ। জখম অবস্থায় খালের মুখে পড়ে, কীৰ্ত্তি রায়ের গড়েব কামানগুলো সব চুপ, নদীর দু’পাড় ঘিরে সন্ধ্যা নেমে আসছে। উৰ্দ্ধে নিস্তত্ব নীল আকাশে কেবলমাত্র এক ঝাক শকুনি কীৰ্ত্তি রায়ের গড়ের উপর চক্রাকারে ঘুরছে- হঠাৎ বিজয়োত্মত্ত নরনারায়ণ রায়ের চােখের সম্মুখে বন্ধু-পত্নীর বিদায়ের রাতের সন্ধ্যার পদ্মের মতন বিষাদভরা মান মুখখানি, কাতর মিনতিপূর্ণ সেই চোখ দুটি মনে পড়ল-তীব্ৰ অনুশোচনায় তার মন