পাতা:মেঘ-মল্লার - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sss মেঘ-মপুর এখতার জন্যে একটু রাখি।-ক্ষেস্তি ক্ষিপ্ৰ হন্তে নারিকেলের উপরের থালাখানা, যাহাতে ফুটা নাই, সেখানা সরাইয়া দিল, অন্নপূর্ণ তাহাতে একটু বেশী করিয়া গোলা ঢালিয়া দিলেন । মেজো মেয়ে পুটি বলিল-জেঠাইমারা অনেকখানি দুধ নিয়েছে, রাঙাদিদি ক্ষীর তৈরী করছিল, ওদের অনেক রকম হবে। ক্ষেন্তি মুখ তুলিয়া বলিল-এ বেলা আবার হবে নাকি ? ওরা তো ওবেলা ব্ৰাহ্মণ নেমাতয় করেছিল সুরেশ কাকাকে আর ও-পাড়ার তিনুর বাবাকে । ও বেলা ত পায়েস, ঝোল-পুলি, মুগতক্তি, এই সব হয়েছে। পুটি জিজ্ঞাসা করিল, হঁ্যা মা, ক্ষীর নৈলে নাকি পাটিসাপটা হয় ন! ? খেদী বলছিল, ক্ষীরের পুর না হলে কি আর পাটিসাপটা হয় ? আমি বললাম, কেন আমার মা তো শুধু নারকেলের ছাই দিয়ে করে, সে তো কেমন লাগে ! অন্নপূর্ণ বেগুনের বেঁটায় একটুখানি তেল লইয়া খোলায় মাথাইতে “মাখাইতে প্রশ্নের সদুত্তর খুজিতে লাগিলেন। ক্ষেন্তি বলিল-খোদির ওই সব কথা । খেদীর মা তো ভারি পিঠে করে কিনা ? ক্ষীরের পূৱ দিয়ে ঘিয়ে ভাজলেই কি আর পিঠে হ’ল ? সেদিন জামাই এলে ওদের বাড়ী দেখতে গেলুম। কিনা, তাই খুড়ীমা দু’খানা পাটিসাপট। খেতে দিলে, ওমা কেমন একটা ধরা ধরা গন্ধ আর পিঠেতে কখনো কোনো গন্ধ পাওয়া যায় ? পাটিসাপটায় ক্ষীর দিলে ছাই খেতে হয় ! বেপরোয়াভাবে উপরোক্ত উক্তি শেষ করিয়া ক্ষেন্তি মা’র চোখের দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল-মা, নারকোল কোরা একটু নেব ? অন্নপূর্ণ বলিলেন-নে, কিন্তু এখানে বসে খাস নে। মুখ থেকে পড়বে नां कि श्य, या ये नेिहक श्र। ক্ষেন্তি নারকেলের মালায় এক থাবা কোরা তুলিয়া লইয়া একটু দূরে গিয়া খাইতে লাগিল। মুখ যদি মনের দর্পণ স্বরূপ হয়, তবে ক্ষেস্তির মুখ দেখিয়া সন্দেহের কোনো কারণ থাকিতে পারিত না যে, সে অত্যন্ত মানসিক তৃপ্তি অনুভব করিতেছে।