পাতা:মেঘ-মল্লার - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেঘ-মল্লার 就総 শুভ রাতটির, যে রাতে আকাশ-ভরা সার্থকতা ওকে বরণ ক’য়ে নেবে ফোটা ফুলের ঘন সুগন্ধের মধ্যে দিয়ে, তরুণ-তরুণীদেয় অনুরাগ-নিম্ন দৃষ্টি-বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে, গভীর রাতের নীরবতার কাছে পাপিয়ার আকুল আত্মনিবেদনের মধ্যে দিয়ে । , , , বাড়ী এসে ভাবতে ভাবতে, এতদিন নানা কাজের ভিড়ে আমার যে বোনটিকে আমি হারিয়ে বসেছিলুম, তারই কাছে স্নেহের বাণী বয়ে নিয়ে যেতে আমার প্রাণ ব্যাকুল হ’য়ে উঠল। এর কযেকদিন পরে কলকাতা ছেড়ে বার হলুম। উমারাণীর কাছে যাবো ব'লে। শীত সেদিন নরম পড়ে এসেছে, ফুটপাথ বেয়ে হাটতে-হাটতে দখিন হাওয়া অতর্কিত ভাবে গায়ের ওপর এসে প’ড়ে উৎপাত সুরু ক’রে দিয়েছে । , , , পরদিন বেলা প্ৰায় দুটোর সময় ওদের ষ্টিমার ষ্টেশনে নেমে শুনলুম, ওদের গী সেখান থেকে প্ৰায় চার ক্ৰোশ । হেঁটে যাওয়া ছাড়া নাকি কোন উপায় নেই, কোন রকম যান-বাহনের সম্পূর্ণই অভাব। কখনে। এদেশে আসিনি, জিজ্ঞাসা করতে করতে পথ চলতে লাগলুম। কাচা রাস্তার দুধারে মাঠ, মাঝে মাঝে লতাপাতায় তৈরী বড় বড় ঝোপ । কোন কোন ঝোপের তাজা সবুজ ঘন বুনানি মাথা আলো ক’রে ফুটে অাছে সাদা সাদা মেটে আলুর ফুল। মাঠে মাঠে মাটির ঢেলার আড়ালে নুপসি গাছে দ্রোণ-ফুলের খই ফুটে আছে । মাঠ ছাড়ালে গ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে মাটির পথের ওপর অভ্যর্থনা বিছিয়ে রেখেছে রাশি রাশি সজনে ফুল। গ্রামের হাওয়া আমের বোলের আর বাতাবী লেবু ফুলের গন্ধে মাতাল। বুনে। কুলে আর বৈঁচি গাছের বনে কোন কোন মাঠ ভর। পড়ন্ত রোদে গাছপালার তলায়, ঘন ঝোপের মধ্যে ফঁাকা জায়গায় ছোট ছোট পাখির দল কিচ কিচ করছে, মাঝে মাঝে কোন কোন জঙ্গলের কাছ দিয়ে যেতে যেতে কোন অজ্ঞাত বনফুলের এমনি সুগন্ধ বেরুচ্ছে, যে, তার কাছে খুব দামী এসেন্সের গন্ধও হার মানে। পায়ের শব্দ পেয়ে শুকনো