কেষ্ট তেমনিভাবে বলিল, রুইমাছের মুড়োর তরকারি, সন্দেশ, রসগো-
ইস্! বলি মেজ-ঠাকরুণ মুড়োটা কার পাতে দিলেন?
হঠাৎ এই প্রশ্নে কেষ্টর মুখখানি পাণ্ডুর হইয়া গেল। উদ্যত প্রহরণের সম্মুখে রজ্জুবদ্ধ জানোয়ারের প্রাণটা যেমন করিয়া উঠে, কেষ্টর বুকের ভিতরটায় তেমনিধারা করিতে লাগিল। দেরি দেখিয়া কাদম্বিনী কহিলেন, তোর পাতে বুঝি।
গুরুতর অপরাধীর মত কেষ্ট মাথা হেঁট করিল।
অদূরে দাওয়ায় বসিয়া নবীন তামাক খাইতেছিলেন। কাদম্বিনী সম্বোধন করিয়া বলিলেন, বলি, শুনলে ত?
নবীন সংক্ষেপে হু বলিয়া হু কায় টান দিলেন।
কাদম্বিনী উষ্মার সহিত বলিতে লাগিলেন, খুড়ী আপনার লোক, তার ব্যবহারটা দেখ! পাঁচুগোপাল আমার রুইমাছের মুড়ো বলতে অজ্ঞান, সে কি তা জানে না? তবে কোন্ আক্কেলে তার পাতে না দিয়ে বেনাবনে মুক্তে ছড়িয়ে দিলে? বলি হাঁ রে কেষ্ট সন্দেশ-রসগোল্লা খুব পেট-ভরে খেলি? সাতজন্মে কখনও তুই এ-সব চোখেও দেখিসনি। স্বামীর দিকে চাহিয়া বলিল, যারা দুটি ভাত পেলে বেঁচে যায়, তাদের পেটে লুচি-সন্দেশ কি হবে! কিন্তু আমি বলচি তোমাকে, কেষ্টকে মেজগিন্নী বিগড়ে না দেয় তো আমাকে কুকুর বলে ডেকো।
নবীন মৌন হইয়া রহিলেন। কারন স্ত্রী বিদ্যমানে মেজবৌ তাহাকে বিগড়াইয়া ফেলিতে পারিবে, এরূপ দুর্ঘটনা তিনি বিশ্বাস করিলেন না। তাঁহার স্ত্রীর কিন্তু স্বামীর উপরে বিশ্বাস ছিল না, বরং ষোলআনা ভয় ছিল, সাধাসিধা ভালোমানুষ বলিয়াযে-কেহ তাঁহাকে ঠাকাইয়া লইতে পারে। সেইজন্য ছোটভাই কেষ্টর মানসিক উন্নতিঅবনতির প্রতি সেই অবধি তিনি প্রখর দৃষ্টি পাতিয়া রাখিলেন।
পরদিন হইতেই দুটো চাকরের একটাকে ছাড়ান হইল, কেষ্ট নবীনের ধান-চালের আড়তে কাজ করিতে লাগিল। সেখানে সে ওজন করে, বিক্রি করে, চার-পাঁচ ক্রোশ পথ হাঁটিয়া নমুনা সংগ্রহ
১১