শুনি? আজ আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, মেজবৌ, ওকে তুমি একশ'বার ডেকো না। আমাদের ভাইবোনের কথার মধ্যে থেকো না।
হেমাঙ্গিনী কথা কহিলেন না। কেঁচো সাপের মত চক্র ধরিয়া কামড়াইয়াছে শুনিয়া, তাঁহার বিস্ময়ের পরিসীমা রহিল না। জানালা হইতে ফিরিয়া আসিয়া চুপ করিয়া ভাবিতে লাগিলেন, কত বেশী পীড়নের দ্বারা ইহাও সম্ভব হইতে পারিয়াছে।
আবার মাথা ধরিয়া জ্বর বোধ হইতেছিল, তাই অসময়ে শয্যায়, আসিয়া নির্জ্জীবের মত পড়িয়া ছিলেন। তাঁহার স্বামী ঘরে ঢুকিয়া ইহা লক্ষ্য না করিয়াই ক্রোধাভরে বলিয়া উঠিলেন, বৌঠানের ভাইকে নিয়ে আজ কি কাণ্ড বাধিয়ে বসে আছ? কারু আনা শুনবে না, যেখানে যত হতভাগা লক্ষ্মীছাড়া আছে, দেখলেই তার দিকে কোমর বেঁধে দাঁড়াবে, রোজ রোজ আমার এত হাঙ্গামা সহ্য হয় না মেজবৌ। আজ বৌঠান আমাকে না-হক্ দস্তা কথা শুনিয়ে দিলেন।
হেমাঙ্গিনী শ্রান্তকণ্ঠে কহিলেন, বৌঠান হক্ কথা কবে বলেন যে আজ তোমাকে না-হক্ কথা বলেছেন?
বিপিন বললেন, কিন্তু আজ তিনি ঠিক কথাই বলেছেন। তোমার স্বভাব জানি ত। সেবার বাড়ির রাখাল ছোঁড়াটাকে নিয়ে এই রকম করলে, মতি কামারের ভাগ্নের অমন বাগানখানা তোমার জন্যেই মুঠোর ভেতর থেকে বেরিয়ে গেল, উল্টে পুলিশ থামাতে এক শ’ দেড় শ’ ঘর থেকে গেল। তুমি নিজের ভাল-মন্দও কি বোঝা না? কবে এ স্বভাব যাবে?
হেমাঙ্গিনী এবার উঠিয়া বসিয়া স্বামীর মুখপানে চাহিয়া কহিলেন, আমার স্বাভাব যাবে মরণ হলে, তার আগে নয়। আমি মা,— কোলে ছেলেপুলে আছে, মাথার ওপর ভগবান আছেন। এর বেশী আমি গুরুজনের নামে নালিশ করতে চাই নে। আমার অসুখ করেচে-আর আমাকে বকি না-তুমি যাও। বলিয়া গাইয়ের র্যাপার-খানা টানিয়া পাশ ফিরিয়া শুইয়া পড়িলেন।
বিপিন প্রকাশ্যে আর তর্ক করিতে সাহস করিলেন না, কিন্তু মনে
১৯