পাতা:মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মনে স্ত্রী-র উপর এবং বিশেষ করিয়া ঐ গলগ্রহ দুর্ভাগাটার উপর আজ মর্মান্তিক চটিয়া গেলেন।


॥ছয়॥

 পরদিন সকালে জানালা খুলিতেই হেমাঙ্গিনীর কানে বড়-জায়ের তীক্ষ্ণ-কণ্ঠের ঝঙ্কার প্রবেশ করিল। তিনি স্বামীকে সম্বোধন করিয়া বলিতেছেন, ছোঁড়াটা কাল থেকে পালিয়ে রইল, একবার খোঁজ নিলে না?

 স্বামী জবাব দিলেন, চুলোয় যাক। কি হবে খোঁজ করে?

 স্ত্রী কণ্ঠস্বর সমস্ত পাড়ার শ্রুতিগোচর করিয়া বলিলেন, তা হলে যে নিজেদের গ্রামে বাস করা দায় হবে। আমাদের শত্রু তো দেশে কম নেই, কোথাও প’ড়ে মরে-টরে থাকলে ছেলেবুড়ো বাড়িসুদ্ধ সবাইকে জেলখানায় যেতে হবে, তা বলে দিচ্চি।

 হেমাঙ্গিনী সমস্তই বুঝিলেন, এবং তৎক্ষণাৎ জানালাটা বন্ধ করিয়া দিয়া একটা নিশ্বাস ফেলিয়া অন্যত্র চলিয়া গেলেন।

 দুপুরবেলা রান্নাঘরের দাওয়ায় বসিয়া খান-কতক রুটি খাইতেছিলেন, হঠাৎ চোরের মত সন্তর্পণে পা ফেলিয়া কেষ্ট আসিয়া উপস্থিত। হইল। চুল রুক্ষ, মুখ শুষ্ক।

 কোথায় পালিয়েছিলি রে কেষ্ট?

 পালাইনি ত। কাল সন্ধ্যার পর দোকানে শুয়েছিলুম, ঘুম ভেঙে, দেখি, দুপুর রাত্তির। ক্ষিদে পেয়েছে মেজদি।

 ও-বাড়িতে গিয়ে খেগে যা। বলিয়া হেমাঙ্গিনী নিজের রুটির থালায় মনোযোগ করিলেন।

 মিনিট-খানেক চুপচাপ দাঁড়াইয়া থাকিয়া কেষ্ট চলিয়া যাইতেছিল, হেমাঙ্গিনী ডাকিয়া ফিরাইয়া কাছে বসাইলেন, এবং সেইখানেই ঠাঁই করিয়া রাঁধুনীকে ভাত দিতে বলিলেন।

 তাহার খাওয়া প্রায় অর্দ্ধেক অগ্রসর হইয়াছিল, এমন সময় উমা বহির্বাটী হইতে ভ্রান্তভাবে ছুটিয়া আসিয়া নিঃশব্দ ইঙ্গিতে জানাইল-

২০