বাবা আসছেন যে!
মেয়ের ভাব দেখিয়া মা আশ্চর্য্য হইয়া বলিলেন, তাতে তুই অমান করছিস কেন?
উমা কেষ্টর পিছনে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিল, প্রত্যুত্তরে তাহাকেই আঙুল দিয়া দেখাইয়া চোখ-মুখ নাড়িয়া তেমনি ইসারায় প্রকাশ করিল-খাচ্ছে যে।
কেষ্ট কৌতূহলী হইয়া ঘাড় ফিরাইয়াছিল। উমার উৎকণ্ঠিত দৃষ্টি, শঙ্কিত মুখের ইশারা তাহার চোখে পড়িল। এক মুহূর্তে তাহার মুখ সাদা হইয়া গেল। কি ত্রাস যে তাহার মনে জন্মিল সেই জানে। মেজদি, বাবু আসচেন, বলিয়াই সে ভাত ফেলিয়া ছুটিয়া গিয়া রান্নাঘরের দোরের আড়ালে দাঁড়াইল। তাহার দেখাদেখি উমাও আর একদিকে পলাইয়া গেল। অকস্মাৎ গৃহস্বামীর আগমনে চোরের দল যরূপ ব্যবহার করে, ইহারাও ঠিক সেইরূপ আচরণ করিয়া বসিল।
প্রথমটা হেমাঙ্গিনী হতবুদ্ধির মত একবার এদিক একবার ওদিক চাহিলেন, তার পরে পরিশ্রান্তের মত দেয়ালে ঠেস্ দিয়া এলাইয়া পড়িলেন। লজ্জা ও অপমানের শূল যেন তাঁহার বুকখানা এফোঁড়-ওফোঁড় করিয়া দিয়া গেল। পরক্ষণেই বিপিন আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সম্মুখেই স্ত্রীকে ওভাবে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া কাছে আসিয়া উদ্বিগ্ন-মুখে প্রশ্ন করিলেন, ও কি, খাবার নিয়ে অমন করে বসে যে?
হেমাঙ্গিনী জবাব দিলেন না। বিপিন অধিকতর উৎকষ্ঠিত হইয়া বলিলেন, আবার জ্বর হল নাকি? অভুক্ত ভাতের থালাটার পানে চোখ পড়ায় বলিলেন, এখানে এত ভাত ফেলে উঠে গেল কে? ললিত বুঝি?
হেমাঙ্গিনী উঠিয়া বসিয়া বলিলেন, না, সে নয়-ও-বাড়ির কেষ্ট খাচ্ছিল, তোমার ভয়ে আড়ালে লুকিয়েচে।
কেন?
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, কেন, তা তুমিই ভাল জান। আর শুধু সে
২১