নয়, তুমি আসছ খবর দিয়েই উমাও ছুটে পালিয়েচে।
বিপিন মনে মনে বুঝিলেন, স্ত্রীর কথাবার্তা বাঁকা পথ ধরিয়াছে। তাই বোধ করি সোজা পথে ফিরাইবার অভিপ্রায়ে সহস্যে বলিলেন, ও বেটি পালাতে গেল কি দুঃখে?
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, কি জানি? বোধ করি মায়ের অপমান চোখে দেখবার ভয়েই পালিয়েচে। পরীক্ষণে একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, কেষ্ট পরের ছেলে সে ত লুকোবেই। পেটের মেয়েটা পর্য্যন্ত বিশ্বাস করতে পারলে না যে, তার মায়ের কাউকে ডেকে একমুটো ভাত দেবার অধিকারটুকুও আছে।
এবার বিপিন টের পাইলেন, ব্যাপারটা সত্যিই বিশ্রী হইয়া উঠিয়াছে। অতএব পাছে একেবারে বাড়াবাড়িতে গিয়া পৌঁছায় এজন্য অভিযোগটিকে সামান্য পরিহাসে পরিণত করিয়া চোখ টিপিয়া ঘাড় নাড়িয়া বলিলেন, না,—তোমার কোন অধিকার নেই। ভিখিরী এলে ভিক্ষেও না। সে যাক-কাল থেকে আর মাথা ধরেনি। ত? আমি মনে করেছি, সহর থেকে কেদার ডাক্তারকে ডেকে পাঠাই-না হয় একবার কলকাতায়-
অসুখ ও চিকিৎসার পরামর্শটা ঐখানেই থামিয়া গেল। হেমাদিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, উমার সামনে তুমি কেষ্টকে কিছু বলেছিলে।
বিপিন যেন আকাশ হইতে পড়িলেন-আমি? কই না। ও হাঁ-সেদিন যেন মনে হচ্ছে বলেছিলুম-বৌঠান। রাগ করেন- দাদা বিরক্ত হন-উমা বোধ করি সেখানে দাঁড়িয়েছিল-কি জান—
জানি, বলিয়া হেমাঙ্গিনী কথাটা চাপা দিয়া দিলেন। বিপিন ঘরে ঢুকিতেই তিনি কেষ্টকে বাহিরে ডাকিয়া বলিলেন, কেষ্ট, এই চারটি পয়সা নিয়ে দোকান থেকে কিছু মুড়িটুড়ি কিনে খেগে যা। ক্ষিদে পেলে আর আসিস্ নে আমার কাছে। তোর মেজদির এমন জোর নেই যে, সে বাইরের মানুষকে একমুঠো ভাত খেতে দেয়।
কেষ্ট নিঃশব্দে চলিয়া গেল। ঘরের ভিতর দাঁড়াইয়া বিপিন
২২