কেষ্ট উৎসাহে দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া বলিল, একলা যেতে খুব পারব। তুমি আজকে আমাকে একটা টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দাও না, মেজদি-আমি কাল সকালেই পুজো দিয়ে তোমাকে প্রসাদ এনে দেব। সে খেলে তক্ষুনি অসুখ সেরে যাবে। দাও না মেজদি আজকেই পাঠিয়ে।
হেমাঙ্গিনী দেখিলেন, তাহার আর সবুর সোয় না। বলিলেন, কিন্তু কাল ফিরে এলে তোকে যে এরা ভারী মারবে। মার-ধোরের কথা শুনিয়া প্রথমটা কেষ্ট দমিয়া গেল, কিন্তু পরক্ষণেই প্রফুল্ল হইয়া কহিল, মারুক গে। তোমার অসুখ সেরে যাবে ত।
আবার তাঁহার চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িল। বলিলেন, হ্যাঁ রে কেষ্ট, আমি তোর কেউ নই, তবে আমার জন্যে তোর এত মাথাব্যাথা কেন?
এ-প্রশ্নের উত্তর কেষ্ট কোথায় পাইবে? সে কি করিয়া বুঝাইবে, তাহার পীড়িত আর্ত্ত হৃদয় দিবারাত্র কাঁদিয়া কাঁদিয়া তাহার মাকে খুঁজিয়া ফিরিতেছে। একটুখানি মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, তোমার অসুখ যে সারাচে না মেজদি-বুকে সর্দ্দি বসেচে যে।
হেমাঙ্গিনী এবার একটুখানি হাসিয়া বলিলেন, আমার বুকে সর্দ্দি বসেছে তাতে তোর কি? তোর এত ভাবনা হয় কেন?
কেষ্ট আশ্চর্য হইয়া বলিল, ভাবনা হবে না মেজদি, বুকে সর্দ্দি বসা যে খারাপ। অসুখ যদি বেড়ে যায়, তা হলে?
তা হলে তোকে ডেকে পাঠাব। কিন্তু না ডেকে পাঠালে। আর আসিস্ নে ভাই।
কেন মেজদি?
হেমাঙ্গিনী দৃঢ়ভাবে মাথা নাড়িয়া বসিলেন, না, তোর আমি এখানে আসতে দেব না। না ডেকে পাঠালেও যদি আসিস্ ত ভারী রাগ করব।
কেষ্ট মুখপানে চাহিনা সভয়ে জিজ্ঞাসা করিল, তা হলে বল, কাল সকালে কখন ডেকে পাঠাবে?
২৯