হেমাঙ্গিনী ধমকাইয়া উঠিলেন-আচ্ছা-হয়েচে-হয়েচে-যা তুই এখান থেকে। আকস্মাত ধমকানি খাইয়া উমা চমকাইয়া উঠিল। আর কোন কথা না কহিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া যাইতেছিল; মা ডাকিয়া বলিলেন, শোনা রে! নাক দিয়ে কি খুব রক্ত পড়েছিল।
উমা ফিরির দাঁড়াইয়া কহিল, না খুব নয়, একটু।
আচ্ছা তুই যা।
উমা কপাটের কাছে আসিয়াই বলিয়া উঠিল, মা, এই যে কেষ্টমামা দাঁড়িয়ে রয়েছে।
কেষ্ট শুনিতে পাইল। বোধ করি ইহাকে অভ্যর্থনা মনে করিয়া মুখ বাড়াইয়া সলজ্জ হাসি হাসিয়া কহিল, কেমন আছ মেজদি?
ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে হেমাঙ্গিনী ক্ষিপ্তবৎ চীৎকার করিয়া উঠিলেন-কেন এসেছিস্ এখানে? যা, যা বলচি শীগ্গির। দূর হ বলচি-
কেষ্ট মূঢ়ের মত ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল-হেমাঙ্গিনী অধিকতর তীব্রকণ্ঠে বলিলেন, তবু দাঁড়িয়ে রইলি হতভাগা-গেলি নে?
কেষ্ট মুখ নামাইয়া শুধু 'যাচ্ছি’ বলিয়াই চলিয়া গেল। সে চলিয়া গলে হেমাঙ্গিনী নিজীবের মত বিছানার একধারে শুইয়া পড়িয়া অফুটে ক্রুদ্ধস্বরে বলিয়া উঠিলেন, একশ’বার বলি হতভাগাকে, আসিসনে আমার কাছে—তবু 'মেজদি’। শিবুকে বলে দিস্ত উমা, ওকে না আর ঢুকতে দেয়।
উমা জবাব দিল না। ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল।
রাত্রে হেমাঙ্গিনী স্বামীকে ডাকিয়া আনিয়া কাঁদ-কাঁদ গলায় বলিলেন, কোনদিন ত তোমার কাছে কিছু চাইনি-আজি এই অসুখের উপর একটা ভিক্ষা চাইচি, দেবে?
বিপিন সন্দিসধ কণ্ঠে প্রশ্ন করিলেন, কি চাই?
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, কেষ্টকে আমাকে দাও-ও বেচারি বড় দুঃখী —মা-বাপ নেই-ওকে ওরা মেরে ফেলচে,—এ আর আমি চোখে
৩১