দেখতে পারচি নে।
বিপিন মৃদু হাসিয়া বলিলেন, তা হলে চোখ বুজে থাকলেই হয়।
স্বামীর এই নিষ্ঠুর বিদ্রুপ হেমাঙ্গিনীকে শূল দিয়া বিঁধিল, অন্য কোন অবস্থায় তিনি ইহা সহিতে পারিতেন না, কিন্তু আজ নাকি, তাঁহার দুঃখে প্রাণ বাহির হইতেছিল, তাই সহ্য করিয়া লইয়া হাতজোড় করিয়া বলিলেন, তোমার দিব্যি করে বলচি, ওকে আমি পেটের ছেলের মত ভালবেসেচি। দাও আমাকে-মানুষ করি।—খাওয়াই পরাই-তার পরে যা ইচ্ছে হয় তোমাদের তাই ক’রো। বড় হলে আমি একটি কথাও কবো না।
বিপিন একটুখানি নরম হইয়া বলিলেন, ও কি আমার গোলার ধান-চাল যে তোমাকে এনে দেব? পরের ভাই, পরের বাড়ি এসেচে, —তোমার মাঝখানে পড়ে এত দরদ কিসের জন্যে?
হেমাঙ্গিনী কাঁদিয়া ফেলিলেন। খানিক পরে চোখ মুছিয়া বলিলেন, তুমি ইচ্ছে করলে বটঠাকুরকে বলে, দিদিকে বলে, স্বচ্ছন্দে আনতে পার। তোমার দুটি পায়ে পড়চি, দাও তাকে।
বিপিন বলিলেন, আচ্ছা, তাই যদি হয়, আমিই বা এত বড়মানুষ কিসে যে, তাকে প্রতিপালন করব?
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, আগে আমার একটা তুচ্ছ কথাও ঠেলতে না এখন কি অপরাধ করেচি যে, যখন এমন করে জানাচ্ছি, বলছি সত্যিই আমার প্রাণ বার হয়ে যাচ্ছে-তবু এই সামান্য কথাটা রাখতে চাইচ না? সে দুর্ভাগা বলে কি তোমরা সকলে মিলে তাকে মেরে ফেলবে? আমি তাকে আমার কাছে আসতে বলব, দেখি ওঁরা কি করেন?
বিপিন এইবার রুষ্ট হইলেন, বলিলেন, আমি খাওয়াতে পারব না।
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, আমি পারব। আমি কি বাড়ির কেউ নই যে, নিজের ছেলেকে খাওয়াতে পারব না। আমি কালই তাকে আমার কাছে এনে রাখব। দিদিরা জোর করেন তা আমি তাকে
৩২