কুরুক্ষেত্র বাধিয়া গেল। বড়গিন্নীর পশ্চাতে পাঁচুগোপাল কেষ্টর কান ধরিয়া হিড়হিড় করিয়া টানিয়া আনিতেছে, সঙ্গে বড়কর্তাও আছেন। মেজকর্তাকেও আনিবার জন্য দোকানে লোক পাঠান হইয়াছে।
হেমাঙ্গিনী শশব্যাস্তে মাথায় কাপড় দিয়া ঘরের একপার্শ্বে সরিয়া দাঁড়াইতেই বড়কর্তা তীব্র কটুকণ্ঠে শুরু করিয়া দিলেন, তোমার জন্যে ত আমরা বাড়িতে টিকতে পারি নে মেজ বৌমা। বিপিনকে বল, আমাদের বাড়ির দামটা ফেলে দিক, আমরা আর কোথাও উঠে যাই।
হেমাঙ্গিনী বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া নিঃশব্দে দাঁড়াইয়া রহিলেন। তখন বড়গিন্নী যুদ্ধ পরিচালনার ভার স্বহস্তে গ্রহণ করিয়া দ্বারের ঠিক সুমুখে সরিয়া আসিয়া, হাত-মুখ নাড়িয়া বলিলেন, মেজবৌ, আমি বড়-জা, তা আমাকেও কুকুর-শিয়াল মনে করা-তা ভালই কর, কিন্তু হাজার দিন বলেচি, মিছে লোক-দেখান আহলাদ দিয়ে আমার ভায়ের মাথাটি খেয়ো না-এখন ঘটল ত? ওগো, দু’দিন সোহাগ করা সহজ, কিন্তু চিরকালের ভারটি ত তুমি নেবে না। —সে ত আমাকেই বইতে হবে।
ইহা যে কটুক্তি এবং আক্রমণ, তাহাই শুধু হেমাঙ্গিনী বুঝিলেন আর কিছু নয়। মৃদুকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন, কি হয়েচে?
কাদম্বিনী আরো বেশী হাত-মুখ নাড়িয়া কহিলেন, বেশ হয়েচে খুব সৎকার হয়েচে! তোমার শেখানোর গুণে আদায়ী টাকা চুরি করতে শিখেচে-আর দু'দিন কাছে ডেকে আরো দুটো শলাপরামর্শ দাও, তা হলে সিন্দুক ভাঙতে, সিঁদ কাটতেও শিখবে।
একে হেমাঙ্গিনী পীড়িত, তাহার উপর এই কদর্য্য বিদ্রুপ ও অভিযোগে আজ তিনি জ্ঞান হারাইলেন। ইতিপূর্বে কখনও কোন কারণে ভাশুরের সুমুখে কথা কহেন নাই; কিন্তু আজ থাকিতে পারিলেন না। মৃদুকণ্ঠে কহিলেন, আমি কি তাকে চুরি-ডাকাতি করতে শিখিয়ে দিয়েচি দিদি?
কাদম্বিনী স্বচ্ছন্দে বলিলেন, কেমন করে জানব, কি তুমি শিখিয়ে দিয়েচ, না দিয়েচ। এ স্বভাব তার তা আগে ছিল না, এখনই বা হ’ল
৩৪