চল, বলিয়া কেষ্ট তাহার ভাঙা ছড়িটা বগলে চাপিয়া লইল এবং ছেঁড়া গাছাখানা কাঁধে ফেলিল।
নিজেদের বাড়ির সদরে গো-যান দাঁড়াইয়াছিল, হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে লইয়া চড়িয়া বসিলেন। গাড়ি যখন গ্রাম ছাড়াইয়া গিয়াছে, তখন পশ্চাতে ডাকাডাকি চিৎকার গারোয়ান গাড়ি থামাইল। ঘর্মাক্ত কলেবরে আরক্ত-মুখে বিপিন আসিয়া উপস্থিত হইলেন; সভয়ে প্রশ্ন করিলেন, কোথায় যাও মেজবৌ!
হেমাঙ্গিনী কেষ্টকে দেখাইয়া বলিলেন, এদের গ্রামে।
কখন ফিরবে?
হেমাঙ্গিনী গম্ভীর দৃঢ়কণ্ঠে উত্তর দিলেন, ভগবান যখন ফেরাবেন, তখনই ফিরব।
তার মানে?
হেমাঙ্গিনী পুনরায় কেষ্টকে দেখাইয়া বলিলেন, কখনও যদি কোথাও এর আশ্রয় জোটে, তবেই একা ফিরে আসতে পারব, না হয়, একে নিয়েই থাকতে হবে।
বিপিনের মনে পড়িল, সেদিনেও স্ত্রীর এমনি মুখের ভাব দেখিয়াছিলেন এবং এমনই কণ্ঠস্বরই শুনিয়াছিলেন, যেদিন মতি কামারের নিঃসহায় ভাগিনেয়ের বাগানখানি বাঁচাইবার জন্য তিনি একাকী সমস্ত লোকের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়াছিলেন। মনে পড়িল, এ মেজবৌ সে নয়, যাহাকে চোখ রাঙাইয়া টলান যায়!
বিপিন নম্রস্বরে বলিলেন, মাপ কর মেজবৌ, বাড়ি চল।
হেমাঙ্গিনী হাতজোর করিয়া কহিলেন, আমাকে তুমি মাপ কর- কাজ না সেরে আমি কোনমতেই বাড়ি ফিরতে পারব না।
বিপিন আর এক মুহুর্ত স্ত্রীর শান্ত দৃঢ় মুখের পানে নিঃশব্দে চাহিয়া রহিলেন, তাহার পর সহসা সুমুখে ঝুঁকিয়া পড়িয়া কেষ্টর ডান-হাতটা ধরিয়া ফেলিয়া বলিলেন, কেষ্ট, তোর মেজদিকে তুই বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আয় ভাই; শপথ করছি, আমি বেঁচে থাকতে তোদের দুই ভাই-বোনকে আজ থেকে কেউ পৃথক করতে পারবে না। আয় ভাই, তোর মেজদিকে নিয়ে আয়।
৪০