আঁধারে আলো
॥এক॥
সে অনেক দিনের ঘটনা। সত্যেন্দ্র চৌধুরী জমিদারের ছেলে; বি. এ. পাশ করিয়া বাড়ি গিয়াছিল, তাহার মা বলিলেন, মেয়েটি বড় লক্ষ্মী-বাবা, কথা শোন, একবার দেখে আয়।
সত্যেন্দ্র মাথা নাড়িয়া বলিল, না মা, এখন আমি কোনোমতেই পারব না। তাহলে পাস হতে পারব না।
কেন পারবি নে? বৌমা থাকবেন আমার কাছে, তুই লেখাপড়া করবি কলকাতায়, পাস হতে তোর কি বাধা হবে, আমি ত ভেবে পাই নে, সতু।
না মা, সে সুবিধে হবে না-এখন আমার সময় নেই, ইত্যাদি বলিতে বলিতে সত্য বাহির হইয়া যাইতেছিল।
মা বলিলেন, যাস নে দাঁড়া,আরও কথা আছে। একটু থামিয়া বলিলেন, আমি কথা দিয়েছি বাবা, আমার মান রাখবি নে?
সত্য ফিরিয়া দাঁড়াইয়া অসন্তুষ্ট হইয়া কহিল, না জিজ্ঞাসা করে কথা দিলে কেন?
ছেলের কথা শুনিয়া মা অন্তরে অত্যন্ত ব্যথা পাইলেন; বলিলেন, সে আমার দোষ হয়েছে, কিন্তু তোকে ত মায়ের সম্রাম বজায় রাখতে হবে। তা ছাড়া, বিধবার মেয়ে, বড় দুঃখী-কথা শোন্ সত্য, রাজী হ!
আচ্ছা, পরে বলব, বলিয়া সে বাহির হইয়া গেল।
মা অনেকক্ষণ চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। ঐটি তাঁহার একমাত্র সন্তান। সাত আট বৎসর হইল স্বামীর কাল হইয়াছে, তদবধি বিধবা নিজেই নায়েব-গোমস্তার সাহায্যে জমিদারী শাসন করিয়া আসিতেছেন। ছেলে কলিকাতায় থাকিয়া কলেজে পড়ে, বিষয়-আশয়ের কোন সংবাদই তাহাকে রাখিতে হয় না। জননী মনে
৪১