বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিন্তু প্রমদার চরিত্র দেখলে মনে হয় না যে, তার ভেতরেও ভগবান ছিলেন। সত্যি বলচি তোমাকে, কোথায় বড় বড় লোকের বই পড়ে মানুষ ভাল হবে, মানুষকে মানুষ ভাল বাসবে, তা-না, এমন বই লিখে দিলেন যে, পড়লে মানুষের ওপর মানুষের ঘৃণা জন্মে যায়-বিশ্বাস হয় না যে সত্যিই সব মানুষের অন্তরেই ভগবানের মন্দির আছে।

 সত্য বিস্মিত হইয়া তাহার মুখপানে চাহিয়া কহিল, তুমি বুঝি খুব বই পড়?

 রমণী কহিল, ইংরাজী জানি নে ত, বাংলা বই যা বেরোয় সব পড়ি। এক-একদিন সারারাত্রি পড়ি-এই যে বড় রাস্তা-চল আমাদের বাড়ি, যত বই আছে সব দেখাব।

 সত্য চমকিয়া উঠিল—তোমাদের বাড়ি?

 হাঁ, আমাদের বাড়ি-চল, যেতে হবে তোমাকে।

 হঠাৎ সত্যর মুখ পাণ্ডুর হইয়া গেল, সভয়ে বলিয়া উঠিল, না না, ছি ছি,

 ছি ছি কিছু নেই-চল!

 না না, আজ না-আজ থাক্‌ বলিয়া সত্য কম্পিত দ্রুতপদে প্রস্থান করিল। এই অপরিচিত প্রেমাস্পদার উদ্দেশে গভীর শ্রদ্ধার ভারে আজ তাহার হৃদয় অবনত হইয়া রহিল।


॥পাঁচ॥

 সকালবেলা স্নান করিয়া সত্য ধীরে ধীরে বাসায় ফিরিয়াছিল। তাহার দৃষ্টি ক্লান্ত, সজল। চোখের পাতা তখনও আর্দ্র। আজ চারদিন গত হইয়াছে সেই অপরিচিতা প্রিয়তমাকে সে দেখিতে পায় নাই-আর তিনি গঙ্গাস্নানে আসেন না।

 আকাশ-পাতাল কত কি যে এই কয়দিন সে ভাবিয়াছে, তাহার সীমা নাই। মাঝে মাঝে এ দুশ্চিন্তাও মনে উঠিয়াছে, হয়ত তিনি বঁচিয়াই নাই, হয়ত বা মৃত্যুশয্যায়! কে জানে!

 সে গলিটা জানে বটে, কিন্তু আর কিছু চেনে না। কাহার বাড়ি

৫১