তিনটি ঘর, বাহির হইতে যতটুকু দেখা যায়, মনে হইল সেগুলি চমৎকার সাজান। কোণের ঘর হইতে উচ্চহাসির সঙ্গে তবলা ও ঘুঙুরের শব্দ আসিতেছিল। দাসী হাত দিয়া দেখাইয়া বলিল, ঐ ঘর-চলুন। দ্বারের সুমুখে আসিয়া সে হাত দিয়া পর্দ। সরাইয়া দিয়া সু-উচ্চকণ্ঠে বলিল, দিদিমণি, এই নাও তোমার নাগর।
তীব্র হাসি ও কোলাহল উঠিল। ভিতরে যাহা দেখিল, তাহাতে সত্যের সমস্ত মস্তিষ্ক ওলট-পালট হইয়া গেল; তাহার মনে হইল, হঠাৎ সে মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িতেছে, কোনমতে দোর ধরিয়া সে সেইখানেই চোখ বুজিয়া চৌকাঠের উপর বসিয়া পড়িল।
ঘরের ভিতরে মোঝেয় মোটা গদি-পাতা বিছানার উপর দু-তিনজন ভদ্রবেশী পুরুষ। একজন হরমোনিয়াম, একজন বাঁয়া-তবলা লইয়া বসিয়া আছে,—আর একজন একমনে মদ খাইতেছে। আর তিনি? তিনি বোধ করি, এই মাত্র নৃত্য করিতেছিলেন, দুই পায়ে একরাশ ঘুঙুর বাঁধা, নানা অলঙ্কারে সর্বাঙ্গ ভূষিত—সুরারঞ্জিত চোখ-দুটি ঢুল-ঢুল করিতেছে; ত্বরিতপদে কাছে সরিয়া আসিয়া, সত্যর একটা হাত ধরিয়া খিল্খিল্ কবি যা হাসিয়া বলিল, বঁধুর মিরগি, ব্যামো আছে নাকি? নে ভাই, ইয়ারকি করিস নে, ওঠ্-ও সবে আমার ভারী ভর করে।
প্রবল তড়িৎ-স্পর্শে হতচেতন মানুষ যেমন করিয়া কাঁপিয়া নড়িয়া উঠে, উহার করস্পর্শে সত্যর আপাদমস্তক তেমনি করিয়া কাঁপিয়া নড়িয়া উঠিল।
রমণী কহিল, আমার নাম শ্রীমতি বিজ্লী-তোমার নামটা কি ভাই? হাবু? গাবু
সমস্ত লোকগুলি হো হো শব্দে অট্টহাসি জুড়িয়া দিল, দিদিমণির দাসীটি হাসির চোটে একেবারে মেঝের উপর গড়াইয়া শুইয়া পড়িল, —কি রঙ্গই জান দিদিমণি!
বিজ্লী কৃত্রিম বোষের স্বরে তাহাকে একটা ধমক দিয়া বলিল, থাম, বাড়াবাড়ি করিস্ নে-আসুন, উঠে আসুন, বলিয়া জোর
৫৩