না, বলিয়া সত্য সিঁড়ির অভিমুখে অগ্রসর হইল। বিজ্লী পিছনে পিছনে চলিতে চলিতে কহিল, কাল দেখা হবে?
না।
আর কি কখনো দেখা হবে না?
না!
কান্নায় বিজ্লীর কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসিল, ঢোঁক গিলিয়া জোর করিয়া গলা পরিষ্কার করিয়া বলিল, আমার বিশ্বাস হয় না, আর দেখা হবে না। কি তাও যদি না হয়, বল, এই কথাটা আমার বিশ্বাস করবে।
ভগ্নাম্বর শুনিয়া সত্য বিস্মিত হইল, কিন্তু এই পনের-ষোল দিন ধরিয়া যে অভিনয় সে দেখিয়াছে, তাহার কাছে ত ইহা কিছুই নয়। তথাপি সে মুখ ফিরাইয়া দাঁডাইল। সে মুখেব বেখায় বেখায় সুদৃঢ় অপ্রত্যয় পাঠ করিয়া বিজ্লীর বুক ভাঙ্গিয়া গেল। কিন্তু সে কি করিবে? হায় হায়! প্রত্যয় করাইবার সমস্ত উপায়ই যে সে আবর্জনার মত স্বহস্তে ঝাট দিয়া ফেলিয়া দিয়াছে!
সত্য প্রশ্ন কবিল, কি বিশ্বাস করব?
বিজ্লীর ওষ্ঠাধর কাঁপিয়া উঠিল, কিন্তু স্বর ফুটিল না। অশ্রু ভারাক্রান্ত দুই চোখ মুহুর্তেব জন্য তুলিয়াই অবনত করিল। সত্য তাহাও দেখিল, কিন্তু অশ্রুব কি নকল নাই। বিজলী মুখ না তুলিয়াও বুঝিল সত্য অপেক্ষা করিয়া আছে; কিন্তু সেই কথাটা যে মুখ দিয়া সে কিছুতেই বাহির কারতেই পারিতেছে না, যাহা বাহিরে আসিবার জন্য তাহার বুকের পাজরাগুলো ভাঙ্গিয়া গুঁডইয়া দিতেছে।
সে ভালবাসিয়াছে। সে ভালবাসার একটা কথা সার্থক করিবার লোভে সে এই রূপের ভাণ্ডার দেহটাও হয়ত একখণ্ড গলিত বস্ত্রের মতই ত্যাগ করিতে পারে—কিন্তু কে তাহা বিশ্বাস করিলে! সে যে দাগী আসামী! অপরাধের শতকোটি চিহ্ন সর্বাঙ্গে মাখিয়া বিচাবের সুমুখে দাঁড়াইয়া, আজ কি করিয়া সে মুখে আনিবে, অপরাধ করাই তাহার পেশা বটে, কিন্তু এবার সে নির্দোষ! যতই বিলম্ব হইতে
৫৭