লাগিল, ততই সে বুঝিতে লাগিল, বিচারক তাহার ফাঁসির হুকুম দিতে বসিয়াছে; কিন্তু কি করিয়া সে রোধ করিবে?
সত্য অধির হইয়া উঠিয়াছে; সে বলিল, চললুম।
বিজ্লী, তবুও মুখ তুলিতে পারিল না; কিন্তু এবার কথা কহিল। বলিল, যাও, কিন্তু যে-কথা অপরাধে মগ্ন থেকেও আমি বিশ্বাস করি, সে-কথা আবিশ্বাস করে যেন তুমি অপরাধী হয়ে না। বিশ্বাস করে, সকলের দেহতেই ভগবান বাস করেন এবং আমরণ দেহটাকে তিনি ছেড়ে চলে যান না। একটু থামিয়া কহিল, সব মন্দিরে দেবতার পূজা হয় না বটে, তবুও তিনি দেবতা। তাঁকে দেখে মাথা নোয়াতে পার, কিন্তু তাঁকে মাড়িয়ে যেতেও পার না। বলিয়াই পদশব্দে মুখ তুলিয়া দেখিল, সত্য ধীরে ধীবে নিঃশব্দে চলিয়া যাইতেছে।
স্বভাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাইতে পারে, কিন্তু তাহাকে ত উড়াইয়া দেওয়া যায় না। নারীদেহের উপর শত অত্যাচার চলিতে পারে, কিন্তু নারীত্বকে ত অস্বীকার করা চলে না। বিজ্লী নর্ত্তকী, তথাপি সে যে নারী! আজীবন সহস্র অপরাধে অপরাধী, তবুও যে এটা নারীদেহ! ঘণ্টা-খানেক পরে সে যখন এ-ঘরে ফিরিয়া আসিল, তখন তাহার লাঞ্ছিত অর্দ্ধমৃত নারীপ্রকৃতি অমৃতস্পর্শে জাগিয়া বসিয়াছে। এই অত্যল্প সময়টুকুর মধ্যে তাহার সমস্ত দেহে যে কি অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটিয়াছে তাহা ঐ মাতালটা পর্যন্ত টের পাইল। সে-ই মুখ ফুটিয়া বলিয়া ফেলিল-কি বাইজী, চোখের পাতা ভিজে যো। মাইরি, ছোঁড়াটা কি একগুঁয়ে, অমন জিনিসগুলো মুখ দিলে না। দাও দাও, থালাটা এগিয়ে দাও ত, হ্যাঁ বলিয়া নিজেই টানিয়া লইয়া গিলিতে লাগিল।
তাহার একটি কথাও বিজ্লীর কানে গেল না। হঠাৎ তাহার নিজের পায়ে নজর পড়ায় পায়ে বাঁধা ঘুঙুরের তোড়া যেন বিছার মত তাহার দু’পা বেড়িয়া দাঁত ফুটাইয়া দিল, সে তাড়াতাড়ি সেগুলো খুলিয়া ছুড়িয়া ফেলিয়া দিল।
একজন জিজ্ঞাসা করিল, খুললে যে?
৫৮