বলে না নাও, দুঃখী অনাথ বামুনের ছেলে বলেও বাড়ির কোণে একটু থাঁই দাও দিদি।
এ স্তুতিতে পুলিশের দারোগার মন ভেজে, কাদম্বিনী মেয়েমানুষ মাত্র। কাজেই সে তখনকার মত চুপ করিয়া রহিল। বুড়া কেষ্টকে আড়ালে ডাকিয়া দুটা শলা-পয়ামর্শ দিয়া চোখ মুছিয়া বিদায় লইল।
কেষ্ট আশ্রয় পাইল।
কাদম্বিনীর স্বামী নবীন মুখুজ্যের ধান-চালের আড়ত ছিল। তিনি বেলা বারোটার পর বাড়ি ফিরিয়া কেষ্টকে বক্র কটাক্ষে নিরীক্ষণ করিয়া প্রশ্ন করিলেন, এটি কে?
কাদম্বিনী মুখ ভারী করিয়া জবাব দিল, তোমার বড়কুটুম গো, বড়কুটুম। নাও, খাওয়াও পরাও, মানুষ কর-পরলোকের কাজ হোক।
নবীন, সৎ-শাশুড়ীর মৃত্যু-সংবাদ পাইয়াছিলেন, ব্যাপারটা বুঝিলেন, কহিলেন, বটে। বেশ নধর গোলগাল দেহটি ত!
স্ত্রী কহিলেন, বেশ হবে না কেন? বাপ আমার বিষয়-আশয় যাকিছু রেখে গিয়েছিলেন, সে সমস্তই মাগী ওর গব ভরে ঢুকিয়েচে। আমি তো তার একটি কানা-কড়িও পেলুম না।
বলা বাহুল্য, এই বিষয়-আশয় একখানি মাটির ঘর এবং তৎসংলগ্ন একটি বাভাবি-নেবুর গাছ। ঘরটিতে বিধবা মাথা গুঁজিয়া থাকিতেন এবং নেবুগুলি বিক্রি করিয়া ছেলের ইস্কুলের মাহিনা যোগাইতেন।
নবীন রোষ চাপিয়া বলিলেন, খুব ভাল।
কাদম্বিনী কহিলেন, ভাল নয় আবার! বড়কুটুম যে গো! তাঁকে তার মত রাখতে হবে ত! এতে আমার পাঁচুগোপালের বরাতে একবেলা এক-সন্ধ্যা জোটে ত তাই ঢ়ের। নইলে অখ্যাতিতে দেশ ভরে যাবে। বলিয়া পাশের বাড়ির দোতলা ঘরের বিশেষ একটা খোলা জানালার প্রতি রোষকষায়িত লোচনের অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেন। এই ঘরটা তার মেজ-জা হেমাঙ্গিনীর।
কেষ্ট বারান্দার একাধারে ঘাড় হেঁট করিয়া বসিয়া লজ্জায় মরিয়া
৬