চিনেছি বোন।
রাধারাণী কহিল, দিদি, সমুদ্র-মন্থন করে বিষটুকু তার নিজে খেয়ে সমস্ত অমৃতটুকু এই ছোট বোনটিকে দিয়েচ। তোমাকে ভালবেসেছিলেন বলেই আমি তাঁকে পেয়েচি।
সত্যেন্দ্রর একখানি ক্ষুদ্র ফটোগ্রাফ হাতে তুলিয়া বিজ্লী একদৃষ্টি দেখিতেছিল; মুখ তুলিয়া মৃদু হাসিয়া কহিল, বিষের বিষই যে অমৃত বোন। আমি বঞ্চিত হইনি ভাই। সেই বিষই এই ঘোর পাপিষ্ঠাকে অমর করেচে।
রাধারণী সে-কথার উত্তর না দিয়া কহিল, দেখা করবে দিদি?
বিজ্লী একমুহূর্ত চোখ বুজিয়া স্থির থাকিয়া বলিল, না দিদি। চার বছর আগে যেদিন তিনি এই অস্পৃশ্যটাকে চিনতে পেরে, বিষম ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেন, সেদিন দর্প করে বলেছিলুম, আবার দেখা হবে, আবার তুমি আসবে। কিন্তু, সেই দর্প আমার রইল না, আর তিনি এলেন না। কিন্তু, আজ দেখতে পাচ্ছি, কেন দর্পহারী আমার সে দর্প ভেঙ্গে দিলেন। তিনি ভেঙ্গে দিয়ে যে কি করে গড়ে দেন, কেড়ে নিয়ে যে কি করে ফিরিয়ে দেন, সে-কথা আমার চেয়ে আর কেউ বেশী জানে না বোন। বলিয়া সে আর একবার ভাল করিয়া আঁচলে চোখ মুছিয়া কহিল, প্রাণের ভগবানকে নির্দ্দয় নিষ্ঠুর বলে অনেক দোষ দিয়েচি, কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি, এই পাপিষ্ঠীকে তিনি কি দয়া করেচেন। তাঁকে ফিরিয়ে এনে দিলে, আমি ষে সব-দিকে মাটি হয়ে যেতুম? তাঁকেও পেতুম না, নিজেকেও হারিয়ে ফেলতুম।
কান্নায় রাধারাণীর গলা রুদ্ধ হইয়া গিয়াছিল, সে কিছুই বলিতে পারিল না! বিজ্লী পুনরায় কহিল, ভেবেছিলুম, কখনো দেখা হলে তাঁর পায়ে ধরে আর একটিবার মাপ। চেয়ে দেখব। কিন্তু আর তার দরকার নেই। এই ছবিটুকু দাও দিদি - এর বেশী আমি চাই নে। চাইলেও ভগবান তা সহ্য করবেন না-আমি চললুম, বলিয়া সে উঠিয়া দাঁড়াইল।
৬৩