অধিক গায়ের জোরে কাপড় কাচিবার কৌশলটা শিখাইয়া দিতেছিলেন। মেজ-জাকে দেখিবামাত্রই বলিয়া উঠিলেন, মাগো, ছোঁড়াটা কি নোংরা কাপড়-চোপড় নিয়েই এসেচে।
কথাটা সত্য। কেষ্টর সেই লাল-পেড়ে ধুতিটা পড়িয়া এবং চাদরটা গায়ে দিয়া কেহ কুটুমবাড়ি যায় না। দুটোকে পরিষ্কার করার আবশ্যকতা ছিল বটে, কিন্তু রজকের অভাবে ঢের বেশী আবশ্যক হইয়াছিল পুত্র পাঁচুগোপালের জোড়া-দুই এবং পিতার জোড়া-দুই পরিষ্কার করিবার। কেষ্ট আপাততঃ তাহাই করিতেছিল। হেমাঙ্গিনী চাহিয়াই টের পাইলেন বস্ত্রগুলি কাহাদের। কিন্তু সে উল্লেখ না করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ছেলেটি কে দিদি? ইতিপূর্বে নিজের ঘরে বসিয়া আড়ি পাতিয়া তিনি সমস্তই অবগত হইয়াছিলেন। দিদি ইতস্ততঃ করিতেছেন দেখিয়া পুনরায় কহিলেন, দিব্যি ছেলেটি ত! মুখের ভাব তোমার মতই দিদি। বলি বাপের বাড়ির কেউ না কি?
কাদম্বিনী বিরক্ত-মুখে জবাব দিলেন, হু, আমার বৈমাত্র ভাই। ওরে, ও কেষ্ট, তোর মেজদিদিকে একটা প্রণাম করা না রে! কি অসভ্য ছেলে বাবা! গুরুজনকে একটা নমস্কার করতে হয়, তাও কি তোর মা মাগী শিখিয়ে দিয়ে মরেনি রে?
কেষ্ট থতমত খাইয়া উঠিয়া আসিয়া কাদম্বিনীর পায়ের কাছেই নমস্কার করাতে তিনি ধমকাইয়া উঠিলেন, আ মর, হাবা কালা নাকি। কাকে প্রণাম করতে বললুম, কাকে এসে করলে!
বস্তুতঃ আসিয়া অবধি তিরস্কার ও অপমানের অবিশ্রাম আঘাতে তাহার মাথা বে-ঠিক হইয়া গিয়াছিল। কথার ঝাঁজে ব্যস্ত ও হতবুদ্ধি হইয়া হেমাঙ্গিনীর পায়ের কাছে সরিয়া আসিয়া শির অবনত করিতেই তিনি হাত দিয়া ধরিয়া ফেলিয়া তাহার চিবুক স্পর্শ করিয়া আশীর্বাদ করিলেন, থাক থাক, হয়েচে ভাই-চিরজীবি হও। কেষ্ট মূঢ়ের মত তাঁহার মুখের পানে চাইয়া রহিল। এ-দেশে এমন করিয়া যে কেহ কথা বলিতে পারে, ইহা যেন তাহার মাথায় ঢুকিল না।
তাহার সেই কুষ্ঠিত ভীত অসহায় মুখখানির পানে চাহিবামাত্র
৯