পাতা:মেয়েলি ব্রত ও কথা - পরমেশপ্রসন্ন রায় (১৯০৮).pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
গাড়শী

ব্রাহ্মণকে দর্শন দিল। অলক্ষ্মী বলিল, আমি কা’ল সন্ধ্যার সময় তোমার ঘরে আসবো। কিন্তু তোমার বউটী ভাল নয়। তুমি তাকে সকালে উঠানে গোবর ছড়া দিতে মানা করো; আমি গোবরের দুর্গন্ধ সইতে পারি না। আর ঠিক সাঁজের সময় যেন সে ঘরে প্রদীপ না জ্বালে; আমি তখন লুকিয়ে তোমার ঘরে আসবে। আর তাও বলি, বউটা তোমার মানা শুনে মনে কিছু সন্দেহ বা দুঃখ না করে, এজন্যে কা’ল তাকে বেশী ক’রে মাছের ঝোল ভাত খেতে দিবে। তা যদি কত্তে পার, তবেই আমি তোমার ঘরে আসতে পারবে। নইলে, তুমি আমার আশা ছাড়ো, আর আমিও তোমার আশা ছেড়ে দি। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ রূপে ও মিষ্ট কথায় মোহিত হয়ে গিয়াছেন। ভাল মন্দ বিচার না ক’রে বউকে ঐ সব করিতে বিশেষ ক’রে মানা করে দিলেন। বউ ভাবলেন শ্বশুরের দুর্ম্মতি হয়েছে। তিনি খুব ভোরে উঠে গোবর ছড়া দিলেন, কিন্তু শ্বশুরের ভয়ে আবার ভাল ক’রে ধুয়ে ফেল্লেন। তারপর গাড়শী ব্রত ক’রে সেদিন মুগের ডাল ভাত আহার করলেন। সন্ধ্যা হ’লে ঘরে প্রদীপ জ্বেলে তখনি নিবিয়ে দিলেন। ঠিক সেই সময়ে, সকলে এক বিকট চীৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখতে পেলে একটা অলক্ষ্মী স্ত্রীমূর্ত্তি আঁস্তাকুড়ের পাশে বেহুস হয়ে পড়ে আছে। সকলে তাকে ‘অলক্ষ্মী’ বলে চিন্তে পাল্লে। বেহুঁস অলক্ষ্মীকে দেখে ব্রাহ্মণের চৈতন্য হলো এবং লক্ষ্মীমূর্ত্তি বৌয়ের শুদ্ধাচারেই যে অলক্ষ্মী ঘরে ঢুকতে পারে নাই তাহা তাঁর জানতে আর বাকী রইল না। তিনি বৌয়ের খুব সুখ্যাত কত্তে লাগলেন।