পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গুল্‌বদন্‌

সুতরাং দুর্দ্দৈবের যে দুঃসহ কোপ অতঃপর বাদ্‌শাহ্-পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করিয়া দুঃখের অতলতলে নিক্ষেপ করিয়াছিল, তাহা তাঁহাকে স্পর্শ করিতে পারে নাই।

 করুণারূপিণী মাহমের অভাবে বাদ্‌শাহ্‌-পরিবার শোকের গভীর অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন হইল। মহিষী, স্বামি-বিচ্ছেদের অসহ্য বেদনা নীরবে বহন করিয়া, স্নেহপীযূষদানে এতদিন সন্তানগণের পিতৃশোক ভুলাইয়া রাখিয়াছিলেন। তাহারা যেন মাহমের মাতৃরূপের মধ্যেই তাহাদের পিতার সন্ধান পাইত। পাছে বাবরের সন্তানগণ কোন প্রকারে মর্ম্মপীড়া বোধ করে, পাছে কোন আচরণে মহামান্য বাবরের সম্মান ও মর্য্যাদাহানি হয়, এই ভয়েই তিনি তটস্থ ছিলেন। তাঁহার মৃত্যুতে সন্তানসন্ততিগণের মধ্যে শুধু যে মাতৃশোকের প্রবাহ বহিয়াছিল, তাহা নহে,—পিতৃশোকও উদ্বেলিত হইয়া উঠিয়াছিল। গুল্‌বদন্ লিখিয়াছেন,— ‘তখন আমি যেন এই সংসার-অরণ্যে আপনাকে নিতান্ত নিঃসঙ্গ ও নিরাশ্রয় বোধ করিলাম। আমি দিবারাত্র তাঁহার জন্য শোক করিয়াছি, কত কাঁদিয়াছি, দুঃখে হাহাকার করিয়াছি। যখন আমি দুই বৎসরের শিশু, তখন আকাম্ (মাহম্) আমাকে কন্যারূপে গ্রহণ করেন, আর ১০ বছর বয়সের সময় তিনি আমাকে পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলেন। এতদিন তিনি আমাকে পরম স্নেহে পালন করিয়াছিলেন।’

 যে সময়ে মানুষের জ্ঞানের উন্মেষ হয়, মানুষ মানুষকে আপনার বলিয়া জানিতে চিনিতে আরম্ভ করে, গুল্ জীবনের সেই সোণার

১৩