পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মোগল-বিদুষী

অগ্রে পরিবার-পরিজনের প্রাণ ও মান বাঁচাইবার জন্য আকুল হইলেন। মহিষীর রক্ষার জন্য তখনই খাজা মুয়জ্জম্‌কে প্রেরণ করা হইল। কিন্তু তখন শত্রুর রণ-তাণ্ডবের মুখে দাঁড়ায় কাহার সাধ্য? হুমায়ূন্ আত্মরক্ষার্থ অশ্বপৃষ্ঠ হইতে নদীতে ঝাঁপ দিলেন। অতুল সুখৈশ্বর্য্যের অধিকারী, রাজরাজেশ্বর ভারত-সম্রাটের বোধ হয় এই সলিল-শয্যাই অন্তিমশয্যা হইত; কিন্তু বিধাতার কৃপায় এই সময় নিজাম্ নামে এক ভিস্তি বায়ু পূর্ণ মশক লইয়া তাঁহার প্রাণরক্ষার্থ অগ্রসর হইল। এই ভিস্তির মশকের আশ্রয়েই হুমায়ূন্ নদী পার হইয়া প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন।

 সহৃদয় কৃতজ্ঞ সম্রাট্ ভিস্তির এই উপকারের কথা বিস্মৃত হ’ন নাই। তিনি যথাসময়ে আগ্রায় পৌঁছিয়া দীন-হীন নিজাম্‌কে প্রতিশ্রুতিমত অর্দ্ধ দিবসের জন্য (গুলবদনের মতে দুইদিন) হিন্দুস্থানের মহামান্য বাদশাহের চিরগৌরবাহ আসনে বসাইয়া কৃতজ্ঞতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। অর্দ্ধ দিবস ভিস্তি-বাদ্‌শাহ্, খোশমেজাজে বহাল্ তবিয়তে বাদ্‌শাহী করিবার অধিকার পাইয়াছিল।

 হুমায়ূনের এই ব্যবস্থায় যে অনেকেই অবমানিত ও অসন্তুষ্ট হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই; এবং রাজ্য ও রাজনীতি হিসাবে এক নগণ্য ভিস্তিকে এরূপ মান-দান যে অশোভন ও অসঙ্গত তাহাও স্বীকার্য্য; কিন্তু এই ঘটনায় এক মুহূর্ত্তে আমরা যেন অপূর্ব্ব মধুর আরব্য রজনীর স্বপ্নালোকের সন্ধান পাই;— মুসলমান্ মানসলোকের আরাধ্য দেবতা, উদার মহৎ

১৮