পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গুল্‌বদন্

কেহই জীবন রূপ ফল পূর্ণরূপে আস্বাদন করে না।—অর্থাৎ, জীবন নশ্বর, তাহার মধ্যেই যতটুকু পার সুখভোগ করিয়া লও।

 সাম্রাজ্যের শাসন-সংরক্ষণে বা রাজনৈতিক ব্যাপারে গুল্‌বদন্ কখন হস্তক্ষেপ করিতেন না। দুর্গাবতী বা চাঁদ সুলতানার ন্যায় অরিহৃদয়ে, অসিমুখে রক্তরেখায় তাঁহার নাম কখন লিখিত হয় নাই সত্য; কিন্তু দীনদুঃখীর অন্তরে কৃতজ্ঞতার উজ্জ্বল অক্ষরে করুণাময়ী স্বয়ং যে নাম লিথিয়াছিলেন, তাহা খোদার পুণ্য নামের সহিত নিত্য উচ্চারিত হইত।

 অবরোধ-প্রথার প্রচলনে ভারত-মহিলাগণের কার্য্যের পরিধি অতি সঙ্কীর্ণ; কদাচিৎ অন্তঃপুর-নেপথ্যের বহির্ভাগে সংসার-রঙ্গমঞ্চের উপরে তাঁহাদের গৌরবাভিনয় প্রদর্শিত হয়; তথাপি এই নেপথ্যাভিনয়ের অলক্ষ্য প্রভাব মানব অন্তরে অন্তরে অনুভব করে;—গুল্ তাহার উজ্জল দৃষ্টান্তস্থল। বাবর-দুহিতা বালিকা গুল্ পিতার অসীম স্নেহপাত্রী ছিলেন; পরে হুমায়ূনের রাজত্বকালে সুখে দুঃখে ভ্রাতৃমুখে স্নেহময়ী ভগিনীর নাম; অতঃপর ভ্রাতুষ্পুত্র আকবর পিতৃষ্বসাকে যে অসীম শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতেন, ইতিহাসে সে নিদর্শনের অভাব নাই। সম্রাট্ অনেকবার তাঁহাকে ধনরত্ন উপহার দিয়াছেন (Badauni, ii. 332) এবং তাঁহার কোন উপরোধ কখন উপেক্ষা করেন নাই। গুলবদন ও পত্নী সলীমা সুলতানের অনুরোধেই তিনি শাহ্‌জাদা সলীমের বিদ্রোহ অপরাধ ক্ষমা করিয়াছিলেন। কে বলিবে এইরূপ কত গুরুতর ব্যাপারে

৫৫