মোগল-বিদুষী
অথবা তাঁহার নিজের ব্যবহারার্থ দুষ্প্রাপ্য হস্তলিথিত পুঁথির নকলকার্য্যের জন্য নিযুক্ত করিয়াছিলেন। যে-সকল লেখক তাঁহার যত্ন ও চেষ্টায় যশস্বী হন, তন্মধ্যে মুল্লা সফী-উদ্দীন্ অর্দ্দবেলীর নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যচর্চ্চার সুবিধার জন্য, সফী-উদ্দীন জেবের অর্থে আরামে কাশ্মীর-বাস করিতেন। তিনি ‘জেব্-উৎ-তফাসির’ নাম দিয়া কোরাণের আর্বী মহাভাষ্য ফার্সীতে অনুবাদ করেন। সফী-উদ্দীন গ্রন্থখানি জেব্-উন্নিসার নামে প্রচার করিয়াছিলেন। এইরূপ আরও কয়েকখানি গ্রন্থ জেবের নামে প্রচলিত; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি নিজে ঐ সকল গ্রন্থ রচনা করেন নাই। লেখকগণ কৃতজ্ঞতা-প্রকাশের জন্য তাঁহার নাম ঐ সকল গ্রন্থে নিবদ্ধ করিয়াছিলেন।
প্রকৃতি জেব্-উন্নিসাকে সৌন্দর্য্যের ললামভূতা করিয়া সৃষ্টি করিয়াছিলেন। বাহিরের রূপ, আর অন্তরের পাণ্ডিত্য ও কবিত্ব-প্রতিভা তাঁহার অসামান্য গৌরবের কারণ হইয়াছিল। মোগলের নিভৃত ঘনঘোর অন্তঃপুরে পর্দ্দার অন্তরালে বাস করিয়াও জেব্, পত্রাচ্ছাদিত, সুরভি-সৌন্দর্য্য-মণ্ডিত গোলাপ পুষ্পের ন্যায় আপনাকে ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে লুক্কায়িত রাখিতে পারেন নাই—দেশদেশান্তরে তাঁহার যশ পরিব্যাপ্ত হইয়াছিল।
কিন্তু বাদ্শাহী-অন্তঃপুরের নিভৃত মালঞ্চে, বাদ্শাহ্জাদীর মানস-লতিকায় যে-সকল কবিতাগুচ্ছের বিকাশ হইয়াছিল, আজ তাহা কোথায়? তাহার অধিকাংশই বিজনবনের ফুলের মত, লোকচক্ষুর অন্তরালে ফুটিয়া উঠিয়া ঝরিয়া পড়িয়াছে। ইতিহাসের
৬৬