পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిషి যশোহর-খুলনার ইতিহাস মন্দিরের কার্য্য শেষ হইলে, তান্ত্রিক বিধানে মহাসমারোহে মায়ের মূৰ্ত্তির অঙ্গরাগ ও অভিষেকাদি করিয়া পূজার সুব্যবস্থা করা হইল। এ সকল কাৰ্য্য রাজগুরু তর্কপঞ্চানন ও র্তাহার পুত্ৰগণের সাহায্যে সুসম্পন্ন হইল। সম্ভবতঃ কালীঘাট হইতে ভুবনেশ্বর ব্রহ্মচারীও এই সময়ে যশোহরে আগমন করিয়াছিলেন। মায়ের আবির্ভাবে প্রতাপেরও জীবন-স্রোত সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হইয় গেল। বৈষ্ণব কুলে তাহার জন্ম ; রামচন্দ্র নিয়োগী হইতে তদ্বংশীয়ের সকলেই বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত ; তন্মধ্যে আবার বিক্রমাদিত্য ও বসন্তরায় বৈষ্ণব চূড়ামণি । প্রতাপও বাল্যকাল হইতে, এমন কি রাজা হইবার পরও কিছুদিন বৈষ্ণব মতের পক্ষপাতী ছিলেন, গোবিন্দ দাসের প্রতি ভক্তিমান ছিলেন। কিন্তু তাহার ধর্থের কোন অনুষ্ঠান ছিল না, যোদ্ধজীবনের মধ্যে তাহার কোন অৰসরও ছিল না । তিনি ধৰ্ম্মের ভাব দেখাইতেন, কিন্তু ধৰ্ম্ম তাহাকে অধিকৃত করিতে পারে নাই। এইবার সে ভাব চলিয়া গেল ; মায়ের আবির্ভাবে প্রতাপের মতি গতি ফিরিয়া গেল। তিনি নূতন ভাবে অনুপ্রাণিত হইয় তর্কপঞ্চাননের নিকট শাক্তমঞ্জে তান্ত্রিক দীক্ষা গ্রহণ করিলেন । শক্তির উপাসক এবার নিজে মহাশক্তির পূজা করিতে লাগিলেন। অরণ্যে লোকারণ্য হইল ; অসংখ্য লোকে মায়ের দুয়ারে পূজা দিতে আসিতে লাগিল। চতুর্দিকে প্রচারিত হইল যে, প্রতাগের প্রতি কৃপাপরবশ হইয়া দেবী স্বয়ং আবিভূত হইয়াছেন। লোকে বলিতে লাগিল, প্রতাপাদিত্য দেবী ভবানীর বরপুত্র। তাই কবিবর ভারতচন্দ্র তাহার সম্বন্ধে লিখিয়া গিয়াছেন—“বরপুত্র ভবানীর, প্রিয়তম পৃথিবীর।” ধৰ্ম্মকে ধরিতে পারিলে জীবনের একটা লক্ষ্য স্থির হয় ; তখন লোকমত আসিয়া ধৰ্ম্মনিষ্ঠকে আশ্রয় করে। লোকে শুনিল, প্রতাপাদিত্য এক স্বপ্ন দেখিয়াছেন যে, দেবী যুদ্ধে বা রাজ্য শাসনে চিরকাল তাহার সহায় থাকিবেন ; তিনি স্ত্রীলোকের প্রতি অত্যাচার না করিলে বা রাজলক্ষ্মীকে নিজে দূরীভূত না করিলে, যশোরেশ্বরী মাত কখনও তাহাকে বিমুখ হইবেন না। এ স্বপ্ন বৃত্তাস্তের মূল কোথায়, তাহা জানা যায় না ; তবে অচিরে একথা চারিদিকে প্রচারিত হইয়া পড়িল। সেইরূপ প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে দেবানুগৃহীত মানব বলিয় প্রতাপের প্রতিপত্তি সৰ্ব্বত্র স্বপ্রতিষ্ঠিত হইল। তেজঃসম্পন্ন মুনার সুপ্তি,