পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Xboe যশোহর-খুলনার ইতিহাস দ্বীপোপদ্বীপে গিয়া উপনিবেশ স্থাপন ও সভ্যতা বিস্তার করিয়াছিল, তাহাদের গতিপথ রূদ্ধ হইল ; যে বঙ্গবণিকেরা সচরাচর সিংহল পর্য্যন্ত স্বচ্ছন্দে বাণিজ্য করিত, তাহাদের ব্যবসায় বন্ধ হইয়া গেল । তাহদের অগণ্য পণ্য কতক লুটিয়া লইত, কতক বা হাট বাজার হইতে সস্তায় কিনিয়া লইয়া এই ফিরিঙ্গির অর্থাগমের পথ সোজা করিত। এই সময় হইতে দেশীয় বণিকদিগের পক্ষে সামুদ্রিক বাণিজ্য বন্ধ হইল। অনেক আদার ব্যাপারাও পূৰ্ব্বে জাহাজের খবর রাথিত, এখন তাহার কূপমণ্ডকের মত গণ্ডীবদ্ধ হইয়া পড়িল। তখন পণ্ডিতের কথায় কথায় বলিতেন “কিমাদক-বণিজঃ বহিস্ৰ-চিন্তয়া” অর্থাৎ আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরে কাজ কি ? যে বঙ্গ একদিন শস্ত-সম্ভারের প্রাচুর্যে জগতের পূণ্যভাণ্ডার বলিয়া গণ্য হইত, সে বঙ্গ আজ অল্প-বস্ত্রের অভাবে দীন হীন৷ কাঞ্জলিনী। আজ আমাদের প্রাচীন গৌরব বিলুপ্ত ; আমাদের ঔপনিবেশিকত বা বাণিজ্য প্রবৃত্তি একেবারে স্বযুপ্ত ; আমাদের সমুদ্রযাত্রা শাস্ত্রশাসনে নিষিদ্ধ। যাহার এক দিন সগৰ্ব্বে সপ্ত ডিঙ্গা ভাসাইয়া সিংহলে, সৌরাষ্ট্রে বা অম্মাজে গিয়া অবাধে বাণিজ্য করিত, তাহারা আজ কালাপানির ভয়ে থরহরি কম্পিত । কেন এমন হইল ? কথা হইতে এমন হইল ? কে বঙ্গের ধ্বংসের পথ প্রথম প্রস্তুত করিল ? অমুসন্ধিৎসু পাঠকমাত্রেই স্বচ্ছন্দে ঘোষণা করিতে পারিবেন, এই মগ ও ফিরিঙ্গিদস্থ্যর অবিশ্রাস্ত আক্রমণ, অক্লান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অমামুৰ্ষিক অত্যাচারই বঙ্গ ধ্বংসের অন্যতম কারণ এই অত্যাচারে বঙ্গের যাহা অনিষ্ট হইয়াছে এমন অনিষ্ট বোধ হয় কোন দেশের আধুনিক ইতিহাসে পাওয়া যায় না। যিনি যখন এই অত্যাচার হইতে বঙ্গবাসীকে রক্ষা করিবার জন্ত বদ্ধপরিকর হইয়াছিলেন, তিনিই ধন্ত, তিনিই প্রকৃত স্বদেশহিতব্ৰতে সৰ্ব্বীপ্রগণ্য। মহারাজ গ্রতাপাদিত্য এই অত্যাচার নিবারণ করিবার জন্ত কত দুর্গ নিৰ্ম্মাণ ও সৈন্ত গঠন করিয়াছিলেন ; তাহার বিবরণ পরে দিবার জন্যই পূৰ্ব্বক্ষণে এই অত্যাচারকাহিনী বর্ণনা করিয়া লইতেছি । আমরা দেখিব, প্রতাপাদিত্য যত দিন জীবিত ছিলেন, ততদিন এই দম্বদিগের উৎপাত দমিত ছিল ; তাহার মৃত্যুর পর হইতে সিবাষ্টিন গঞ্জেলিস নামক এক দুৰ্দ্ধান্ত নায়কের কর্তৃত্বাধীন হইয়া আবার ফিরিঙ্গির ভীষণ হইয়া উঠিয়াছিল। এইরূপে আবার ৫০ বৎসর কাল তাহাদের দারুণ অত্যাচাব চলিয়াছিল, ম্যানবিকের চক্ষুষ সাক্ষা হইতে তাহার কতক আভাষ পূৰ্ব্বে দিয়াছি।