পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W যশোহর-খুলনার ইতিহাস স্বাধীন ; লোদীদিগের দুৰ্ব্বল শাসন তখন দিল্লী আগ্রী হইতে বহুদূরে বিস্তৃত হইতে পারিয়াছিল না । বঙ্গে তখন শান্তি সুখ বিরাজিত ; হুসেন শাহ যেমন সতর্ক ও বলশালী, তেমন বহিঃশত্রুর আক্রমণের সম্ভাবনাও বড় কম। শাস্তি ও স্বাধীনতার স্নিগ্ধচ্ছায়ায় প্রজার সমৃদ্ধি ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতেছিল। নিৰ্ব্বাণের পূৰ্ব্বে দীপশিখা যেমন জলিয় উঠে, রাজধানী গৌড়ের ধনৈশ্বৰ্য্যও তেমনি হঠাৎ বিবৰ্দ্ধিত হইয়। পড়িয়াছিল। সেই গৌড়ের পতনের পর কিরূপে যশোরের সমুখীন হইয়াছিল, তাহাই এই গ্রন্থে বিবৃত হইবে। নসরৎ বিলাসী হইলেও স্বশাসক ছিলেন। তাহারই সময়ে মোগল-কুলতিলক বাবর লোদীদিগকে বিতাড়িত করিয়া পাঠান রাজত্ব করায়ত্ত করেন এবং আগ্রার রাজতত্ত্ব অধিকার করিয়া লন। তিনি বঙ্গের দিকেও তাহার প্রবল বাহিনী পরিচালিত করিয়াছিলেন, কিন্তু সুচতুর নসরৎ সামান্ত উপঢৌকনে তাহাকে পরিতৃপ্ত করিয়া প্রতিনিবৃত্ত করিয়াছিলেন। অচিরে বাবর ও তৎপরে নসরৎ মৃত্যুমুখে পতিত হন। তখন বাবরের পুত্র হুমায়ুন দিল্লীতে এবং নসরতের ভ্রাতা মাহমুদ গৌড়ের সিংহাসনে আরোহণ করেন। আদিমকাল হইতে ভারতবর্ষের একটি প্রকৃতি দেখা গিয়াছে যে, যখনই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অতিক্রম করিয়া কোনও বহিঃশত্র এই দেশে প্রবেশ করিয়াছে, সেই পূৰ্ব্বতন শাসন বিপৰ্য্যস্ত করিয়া আত্মপ্রতিষ্ঠা করিতে সমর্থ হইয়াছে।* আর্য্যদিগের প্রথম আগমন হইতে মোগল আক্রমণ পৰ্য্যস্ত এই একই ব্যবস্থা চলিয়াছে। মোগল আসিবামাত্র পাঠানের পতন আরম্ভ হইল। তবে উভয় জাতির সংঘর্ষ মিটিতে শতাব্দী পার হইয়া গিয়াছিল। লোদীগণ আগ্রার সীমা হইতে বিতাড়িত হুইবার পরদিন ভারতের সমস্ত পাঠান সম্প্রদায় এক হইয়া গেল এবং পাঠান প্রতিপত্তি পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্ত সৈন্তবল সংগ্ৰহ করিতে লাগিল। অবিরত চতুর্দিক হইতে দিল্লী আগ্রার উপর আক্রমণ চলিতেছিল ; নবাগত মোগলরাজকে তরঙ্গের পর তরঙ্গের মত এই পাঠান বাহিনীর বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইতে হইয়াছিল। লোদী, লোহানী, স্থর প্রভৃতি আফগান জাতির মোগলবংশ নিৰ্ম্মল করিবার জন্ত সৰ্ব্বত্র বিপুল ষড়যন্ত্রের আয়োজন করিতেছিল। কিন্তু বীরত্বে মোগলের অতুল, বিপদসমুল প্রদেশে সহিষ্ণুতায় অজেয় ; তাই আফগানের

  • Hunter's Orissa Vol. II p. 14