পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঈশ্বরীপুরের দুরবস্থা ৪৩৯ মাতা যশোরেশ্বরীই যশোহর-রাজবংশের ভাগ্যদেবতা। এই পীঠমুক্তি যতদিন জাগ্রত থাকিবেন, ততদিত শত ভাগ্য-বিপর্যায়েও এই বংশের বিনাশ নাই। এই পীঠদেবতা কতবার জাগিয়া বিলুপ্ত হইয়াছেন, কিন্তু একবারে অন্তহিত হন নাই। কতবার কত রাজাকে জাগাষ্টবার জন্য ইনি জাগিয়াছেন, আবার সে সব রাজার পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভূপ্রোথিত হইয় লোক চক্ষুর অন্তরালে গিয়াছেন। সুন্দরবনের উত্থান-পতনের সঙ্গে মাতার আবির্ভাব তিরোভাব সম্পন্ন হইয়াছে। সে এক অদ্ভূত ব্যাপার । যেমন প্রতাপাদিত্যের পতন হইল, অমনি এক আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটিল ; পীঠস্থান ধূমঘাট ক্রমে ক্রমে জলাকীর্ণ ও জঙ্গলাকীর্ণ হইয়৷ মানুষের বাসের অযোগ হইয়া পড়িল। শুধু মোগল ফৌজদার বা রাজবংশধরগণ নহেন, সাধারণ বাসিন্দারাও ঈশ্বরীপুর ছাড়িয় নানাস্থানে পলাইয়া গেল । প্রতাপাদিত্যের সময়ের সেবাইত অধিকারিগণ আর ঈশ্বরীর পূজা করিতে পারিলেন না ; প্রথমতঃ যমুনার পরপারে মামুদপুরে থাকিয়া পূজা করিয়া যাইতেন, শেষে সেখান হইতে গোপালপুর ও পরে পরমানন্দকাটিতে গিয়া বাস করিলেন এবং তথা হইতে নিত্য অশ্বগৃষ্ঠে একবার আসিয়া মায়ের চরণে পুষ্প দিয়া যাইতেন। অবশেষে তাহাও সম্ভবপর রহিল না, গ্রাসাচ্ছাদনের অসংস্থান হইল, দেশ ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন। মায়ের নিত্যপূজা কত বৎসরের জন্য একেবারে বন্ধ হইয়া গেল। ঈশ্বরীপুরে ডাকাষ্টতের আড্ড উইল, মাত৷ ডাকাইতের পূজা লইতেন। সময়ে সময়ে দুঃসাহসিক ভক্তগণ দূরস্থান হইতে আসিয়া মায়ের পূজা দিয়া বাটতেন। এখনও মায়ের বাড়ীর সন্নিকটে সর্দার উপাধিধারী কয়েকঘর মুসলমান কতকগুলি নিষ্কর জমির অধিকারী হইয়া বাস করিতেছেন। লোকে বলে, উহারাষ্ট সেই আমলের বাসিন্দী এবং উহাদের পূৰ্ব্বপুরুষগণ দুস্থাবৃত্তি দ্বার জীবন যাপন করিতেন। বেশীদিন আর তাহদের সে ব্যবসায় ভাল লাগিল না । তাহারাই নির্জন-প্রবাস ত্যাগ করিবার জন্ত অন্ত লোক আনিয়া বসাইতে চেষ্টা করিলেন। প্রবাদ এষ্ট, এমন সময় বর্তমান অধিকারদিগের এক পূৰ্ব্বপুরুষ জয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় ধান্ত সংগ্রহের জন্ত দৈবাৎ এ অঞ্চলে আসেন, সঙ্গারগণ প্রলুব্ধ কবিয়া তাহাকে এখানে বসাইলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারস্তে এই ঘটনা হয় ।