পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৬২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা সীতারাম রায় లిలి লাগিল, শ্রাস্তুপথিক স্বচ্ছদে দীর্ঘপথ বাহন করিয়া গৃহস্থ গৃহে অতিথি হইতে লাগিল। স্তন্ধ নিশীথে নদীপথে আবার সারাগান উঠিল, আবার পল্লীতে পল্লীতে স্বচ্ছন্দ-জীবিকার আনন্দ-লহরী ছুটিল। হুসেন সাহের আমলে বঙ্গের লোকে বহুকাল পরে মুখস্বাচ্ছন্দোর মুখ দেখিয়া হুসেনী যুগকে স্মরণীয় করিয়া রাথিয়াছে, সীতারামের আমলে ও ভূষণ অঞ্চলে প্রজাবৰ্গ “সীতারামী মুখ" সম্ভোগ করিতে লাগিল। গ্রাম্য কবির গান রচনা করিলেনঃ– “ধষ্ঠ রাজা সীতারাম বাঙ্গালা বাহাদুর র্যা’র বলেতে চুরা ডাকাতি হয়ে গেল দূর । (এখন) বাঘ মামুষে একই ঘাটে মুখে জল খাবে, (এখন) রামা খামী পোটুলা বেঁধে গঙ্গা স্নানে যাবে।” অল্প কথায় অবস্থার আভাস দেওয়াই যদি কবিতার কৌশল হয়, তবে এ অতি মুনীর কবিতা। শেষোক্ত দুইটি পংক্তিতে এদেশের অবস্থা অতি সুন্দর ফুটিয়াছে। প্রকৃতই প্রতি পাদক্ষেপে লোকের বাঘের ভয় ছিল ; মোগলের কঠোর শাসন, জমিদারের পীড়ন, জায়গীরদারের জুলুম, মুকদম, পাটোয়ার বা সাজোয়াল প্রভৃতি করসংগ্রাহক কৰ্ম্মচারীর রাজস্ব ছাড়া বহুবিধ আবওয়াব বা বাজে শুল্ক আদায়ের জষ্ঠ প্রজাদিগকে নিংড়াইয়া রক্তশোষণ-এ সব ত প্রাত্যহিক কাৰ্য্য! ইহার উপর দহু-দুৰ্ব্বত্তের আকস্মিক অত্যাচার নিরীহ পল্লীবাসীকে সৰ্ব্বদা রোমাঞ্চিত করিয়া য়াপিয়াছিল। হিন্দুর পক্ষে তীর্থ ধৰ্ম্ম অসাধ্য হইয়া পড়িয়াছিল ; ধনীর বহু অর্থবায়ে সাজ সরঞ্জাম গুছাইয়া দলবল সহ নৌকা পথে তীর্থযাত্রা করিতেন বটে, কিন্তু গরিবের পক্ষে তাহা সম্ভবপর হুইত না। কিন্তু এখন রামী খামী প্রভৃতি সাধারণ নিঃস্ব স্ত্রীলোকেরাও পোটল বাধিয়া পদব্রজে গঙ্গাস্নানে যাইতে লাগিল । এইভাবে শান্তির মুখ দেখিয়া, নলী পরগণার প্রজাবৰ্গ সীতারামের প্রতি সমাসক্ত হইল এবং পরগণার আয় বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাইল । সীতারাম বাতিমত জমিদার হইয়া বসিলেন । কিছুদিন পূর্বে তিনি ভূষণার অন্তর্গত সমল পরগণার কতকাংশ তালুক বন্দোবস্ত করিয়া লষ্টয়া ছিলেন, শাসন-কৌশলে তাহারও আয় বাড়িল । বর্তমান মহম্মদপুরের নিকটবৰ্ত্ত স্বৰ্য্যকুণ্ড গ্রামে পূৰ্ব্ব হইতে নলী পরগণার যে কাছারী বাট ছিল, সেখানে তিনি মনোমত অট্টালিকা দ্বারা আবাসবাদী সুশোভিত করিলেন ; এখনও তাছার ভাবশেষ আছে।